তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসল্লিদের নফল নামাজ, জিকির-আসকারের মধ্যদিয়ে গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ।
তাবলিগের ছয় উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মুরসালিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়, তার বয়ান বঙ্গানুবাদ করেন মাওলানা মুফতি আজিম উদ্দিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াসত, তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা জামশেদ, তার বয়ান বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও সাত জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা শামীম আজমী। তবে তা বয়ানের মঞ্চে না পড়িয়ে বিদেশি মুসল্লিদের তাঁবুতে পড়ানো হয়। বহুল কাঙ্ক্ষিত আজকের আখেরি মোনাজাত দিল্লি মারকাযের মুরব্বি মাওলানা জামশেদ পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ : এদিকে আজ আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এবং বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব ধরনের যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে।
বিশেষ ট্রেন :টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে ৫ মিনিট যাত্রাবিরতি করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও চার মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আরও চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ও গতকাল শনিবার ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন : রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার উসমানপুর গ্রামের মৃত হাজী জয়নাল উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আ ফ ম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) ও গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া গ্রামের মো. আবুল কাশেমের ছেলে মো.আব্দুস সোবহান (৮০)। এ নিয়ে ময়দানে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে সাত জন মুসল্লির মৃত্যু হলো।
তাশকিল কামরা : ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে করা হয়েছে তাশকিলের কামরা। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে চিল্লায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জামাতবন্দি করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেয়া হচ্ছে। আখেরি মোনাজাত শেষে এসব মুসল্লি ঢাকার কাকরাইল মসজিদে গিয়ে রিপোর্ট করে তাবলিগের মুরব্বিদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দিনের দাওয়াতি মেহনতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন।