আজকালের মধ্যে বৈশাখি  ভাতা দিন - দৈনিকশিক্ষা

আজকালের মধ্যে বৈশাখি ভাতা দিন

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বৈশাখি ভাতা পেলে কী আর না পেলেই বা কী  ? অনেক  ভেবেচিন্তে এর কোন সদুত্তর পাইনি। নববর্ষের এ ভাতাটি পেলে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সব দুঃখ-কষ্ট কী একেবারে দুর হয়ে যায় ? আর  না পেলে কী তাদের দুঃখ-দুর্দশা আরো বেড়ে যায় ? আসলে মান-সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নে এ দাবি থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই। এটি চেয়ে যেতেই হয়। টাকার বিচারে নয়, মর্যাদার প্রশ্নে এটি আজ পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর প্রাণের দাবি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রি ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে এ ভাতার সংযোজন ও প্রচলন। এটির অন্য একটি বিশেষত্ব এই যে, এর সাথে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের চিন্তা-চেতনা ও স্বপ্ন জড়িত। বাঙালিয়ানার সাথে মানানসই একটি উদ্যোগ । জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রির পক্ষে এ রকম এক উদ্ভাবনী ধ্যান-ধারণা লালন করা সম্ভব হয়েছিল। তার স্নেহ-মমতা ও আশীর্বাদ থেকে দেশের পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বঞ্চিত করে একটি শ্রেণি কী ফায়দা লুটতে চেয়েছে, তা কেবল তারা জানে ?

পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালির চিরন্তন এক সার্বজনীন উৎসব । এ উৎসবটিকে বিতর্কিত করার জন্য বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ইচ্ছে করে বৈশাখি ভাতা দেয়নি সে শ্রেণিটি । বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ও এর স্বকীয়তা বিনষ্ট করা তাদের আসল উদ্দেশ্য কী না, কে জানে ?

শিক্ষক-কর্মচারীগণ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এর ও আরো ওপরে তাদের মর্যাদা। তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা পান। জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত হয়ে যথারীতি অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় এখন। তারা কমবেশ একটা বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পান । দু’ ঈদে একটু একটু করে হলেও দু’টো ঈদ বোনাস পান। তাহলে তারা বৈশাখি ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন কার কথায় কিংবা কিসের যুক্তিতে ?

শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর ও শিক্ষার মেরুদন্ড বিশেষ। তিনি যে কোন স্তরের সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষক যিনি হোন না কেন ? মর্যাদার প্রশ্নে সরকারি কিংবা বেসরকারি বলে কাউকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই । কিন্তু, আমাদের দেশে তাই হয়। আমলা-কামলা ও রাজনীতিবিদদের একটা শ্রেণি শিক্ষকদের বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের কী যে মনে করে- সে কেবল তারাই জানে। তাদের কাছে যেন দু’ পাই পয়সার দাম নেই এ শ্রেণির শিক্ষকদের। অথচ এ শ্রেণির শিক্ষকদের হাতেই তাদের বেশীর ভাগের মানুষ হওয়া ।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অভাব-অভিযোগ দেখার যেন কেউ নেই। তাদের প্রতি সরকার ও রাষ্ট্রের অবহেলা সত্যি দুঃখজনক বটে। বিভিন্ন সময়ে নানা উপলক্ষে সে প্রমাণ মেলে। আসন্ন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বৈশাখি ভাতা নিয়ে দেন দরবার করার সময় সে সত্যটি নির্মম ভাবে আরেকবার ফুটে ওঠেছে ।

গত কয়েকদিনে নানা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ কেবল মানুষ গড়ার কারিগর নয়, গোটা জাতিকে যেমন আশান্বিত করেছে তেমনি বিস্মিত ও হতবাক করেছে । ২৯ মার্চ তারিখে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের বক্তব্যে অনেকেই আশার ঝলক দেখতে পেয়েছেন । কিন্তু, আমরা বিস্মিত হই যখন মাননীয় এমপি মহোদয় বলেন তিনি বিষয়টি এর আগে জানতেন না ।

অবাক লাগে এ কথাটি ভেবে যে, দেশের একজন গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তি পাঁচ লাখের মতো বিশাল এক জনগোষ্ঠীর অতি মৌলিক ও ন্যায্য অধিকারের বিষয়টি জানেন না । তবে তিনি এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা জানানোর কারণে সংশ্লিষ্টরা আধাঁরে আলোক রশ্মি দেখতে পেয়েছেন ।

গত ৯ এপ্রিল মাননীয় অর্থমন্ত্রি এক প্রাক বাজেট আলোচনায় দৈনিকশিক্ষার সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে যে কথা বলেছেন তা সকলকে  পুনরায় আশাবাদী করে তুলেছে। এ সাথে সকলে পুনরায় বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। তিনি ও নাকি বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখি ভাতা না পাবার বিষয়টি জানেন না। তবে তিনি আধাঁরে আলো দেখিয়েছেন এ বলে যে, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে এ বিষয়ে খোজঁ নেবেন । হায় কপাল ! হায় বেসরকারি শিক্ষক ! তাদের খবর কারো জানা নেই । কেউ তাদের খোঁজ খবর রাখে না ।

আমাদের মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তাহলে কাজ কী ? খেয়ে কোন কাজ নেই বুঝি তাদের। আগে থেকে এ বিষয়টি মাননীয় অর্থমন্ত্রি এমনকি প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রির নজরে দেয়া কী উচিত ছিল না তাদের ? এ সম্পর্কিত হিসেব-নিকেশের ফাইলটি কেন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আগেভাগে যায় নাই ?

মাননীয় অর্থমন্ত্রির প্রতি শিক্ষকদের একটি নেগেটিভ ধারণা সুকৌশলে কে বা কারা জন্মিয়ে দিয়েছিল ? অনেকে মনে করতেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে শিক্ষকরা বৈশাখি ভাতা থেকে বঞ্চিত।

কিন্তু, আজ মনে হয় মাউশি ও শিক্ষামন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে তেমন কোন কাজ করে না।মনে হয় তারা কেবল সরকারি শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায় ?  কেবল বেসরকারি শিক্ষকদের হুমকি-ধমকি আর হেনতেন প্রজ্ঞাপন দেবার বেলা তাদের সময় মেলে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রি যখন বলেন শিক্ষকদের কারণে দেশ ডুবে যাচ্ছে -তখন ঢালাও দোষারোপের কারণে সরকারি শিক্ষকদের কষ্ট লাগে কী-না জানিনে তবে বেসরকারি শিক্ষকদের মনে অনেক কষ্ট আসে । এক দু’জনের কারণে গোটা শিক্ষক সমাজকে দায়ী কিংবা অপমান করা চলে না । এ দেশের সকল বড় বড় অর্জন শিক্ষকদের হাতেই ।

মাননীয় এমপি ড.আব্দুর রাজ্জাক তার যে ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা বলেছিলেন সেটি আজকাল দু’দিনের ভেতরে তিনি যদি কাজে লাগান, তবে তিনি দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে অনন্য এক ইতিহাস হয়ে থাকবেন । মাননীয় অর্থমন্ত্রি মহোদয় দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিজ্ঞ মন্ত্রি হিসেবে বেসরকারি শিক্ষকদের মনে যে আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন, সেটিকে চির জাগ্রত করে রাখার সময় ও কেবল আজ- কাল আর মাত্র দু’টো দিন বাকি ।  এ প্রসঙ্গে মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কথা শ্রদ্ধায় মনে পড়ে । তিনি সিলেটে শিক্ষকদের একটি সভায় তাদের কোন এক দাবীর প্রেক্ষিতে বলেছিলেন, ” স্পিকার হিসেবে আমি আপনাদের দাবীটি পুরণ করে দিতে পারবো না । তবে সরকারের ওপর আমার একটা  প্রভাব আছে । সে প্রভাবটুকু খাটিয়ে আমি আপনাদের দাবীটা পুরণ করে দেবার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেব ।” সত্যি সত্যি ঐ দিন তিনি ঢাকা ফিরে যাবার সাথে সাথে শিক্ষকদের দাবী পুরণের সরকারি ঘোষনা এসে যায় । সেটি সম্ভবতঃ বেসরকারি শিক্ষকদের আশি থেকে নব্বই কিংবা নব্বই থেকে শতভাগ বেতন স্কেলে উন্নীত হবার দাবি ছিল ।

মাননীয় অর্থমন্ত্রি যদি এ রকম একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেন, তবে তিনি ও মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মত শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় চিরদিন এ দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন । আমরা সকলে জানি সরকারের ওপর তার ও মরহুম স্পিকারের ন্যায় একটি বিশেষ প্রভাব আছে।

মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066969394683838