আট হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি হাইস্কুল ও কলেজআট হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য

রাকিব উদ্দিন |

শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সরকারি হাইস্কুল ও কলেজের পাঠদান। দেশের ৩৩৩টি সরকারি হাইস্কুল ও ৩২৯টি কলেজে মোট আট হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে হাইস্কুলে তিন হাজার ও কলেজে শূন্য রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের পদ। ২০১২ সালের পর হাইস্কুলে নিয়োগ পেয়েছে মাত্র ১১৩ জন শিক্ষক; নন-ক্যাডারে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে।

আইনি জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে গত ছয় বছর হাইস্কুলে কোন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। তবে পিএসসি হাইস্কুলের জন্য নন-ক্যাডারে কিছুসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করলেও তাদের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগদান করেনি।

স্কুল-কলেজ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা মাউশি অধিদফতরের কর্মকর্তা বলছেন, বারবার নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেও কলেজের শিক্ষক স্বল্পতা নিরসনের জন্য কার্যকর বা বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। প্রশাসনিক জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এ কারণেই শিক্ষক স্বল্পতা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৩৫টি সরকারি ও সদ্য জাতীয়করণ হওয়া কলেজ রয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘৩৫ ও ৩৬তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কলেজে শিক্ষক সংকট কিছুটা কমে আসবে। এরপরও কলেজ শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস নেয়ার চেষ্টা চলছে।’

শিক্ষা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে সরকারি স্কুল রয়েছে ৩৩২টি। এর মধ্যে ১৩১টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে সাতটি। আর সহকারী শিক্ষকের দশ হাজার ৩৫০টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে দুই হাজার ২৬৩টি। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের সমপর্যায়ের জেলা শিক্ষা অফিসারের ২৪টি পদও শূন্য রয়েছে। সবমিলিয়ে স্কুল পর্যায়ে মোট ১১ হাজার ২৭৪টি পদের মধ্যে দুই হাজার ৯৩৯টি পদ শূন্য রয়েছে।

নন-ক্যাডারে স্কুল শিক্ষক নিয়োগে আগ্রহ নেই

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ২০১২ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অধীনে সরাসরি দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয় সরকারি কর্মকমিশনকে। মূলত শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিক তৎপরতা রোধের কারণেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়।

পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষার সব স্তরে উত্তীর্ণ, কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি- এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ৩৪তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য ৪৪৯ জনের নাম সুপারিশ করে পিএসসি। তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মোট ২৮৯ জনকে নিয়োগ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিয়োগপত্র পেয়ে তাদের মধ্যে মাত্র ১১৩ জন স্কুলশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বাকিরা স্কুলে যোগদান করেনি। এজন্য পিএসসির মাধ্যমে নন-ক্যাডার থেকে স্কুলশিক্ষক নিয়োগের আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘যারা ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ার চাকরিতে আবেদন করে, তাদের নন-ক্যাডারে নিয়োগ দিলে চাকরিতে তাদের আগ্রহ না থাকাই স্বাভাবিক। কারণ এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ। পিএসসির সুপারিশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে প্রার্থীদের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হয়।

ওই কর্মকর্তা জানান, ৩৫তম বিসিএস (চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ, কিন্তু পদ স্বল্পতায় নিয়োগ না পাওয়া) থেকেও নন-ক্যাডারে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে ৬০২ জনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যাপারে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ সম্পন্ন হয়েছে। আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোটের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান  বলেন, ‘সরাসরি সহকারী শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা চলছে। পিএসসি বলছে, আমরা প্রস্তাব করলে তারা হাইস্কুলের জন্য সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেবে। এজন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিএসসিতে প্রস্তাব পাঠাবো। কারণ নন-ক্যাডারে অল্প শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।’

জানা গেছে, মাউশি ২০১২ সালে হাইস্কুলে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়। ওই বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫২৬ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পায়। এর আগে ২০১১ সালে এক হাজার ৩৭৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পায়।

কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসনের তোড়জোড়

মাউশি সূত্র জানায়, সারাদেশে ৩৩৫টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এগুলোতে শিক্ষকের মোট পদ ১৬ হাজার ৫৫৪টি। এর মধ্যে অধ্যাপক পদ ৫০৭টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ২২১টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২৮৪টি ও প্রভাষক পদ আট হাজার ২৬টি।

মাউশি’র কলেজ শাখার তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী, সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহর ছাড়া অন্যান্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ২১৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা সবচেয়ে বেশি। এগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাষক পদ, তিন হাজার ৭৭টি।

এছাড়াও অধ্যাপকের পদ প্রায় এক হাজার, সহকারী অধ্যাপকের পদ ৮৫৫টি এবং সহযোগী অধ্যাপকের বেশকিছু পদ শূন্য রয়েছে। তবে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের কলেজে শূন্য পদের সংখ্যা কম।

মাউশির পরিচালক (কলেজ) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হুদা  বলেন, ‘কলেজে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমরা প্রতি বছরই বাংলাদেশ কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) চাহিদা দিচ্ছি, নিয়োগও পাচ্ছি। পাশাপাশি অনেক শিক্ষক অবসরেও যাচ্ছেন। এজন্য সমস্যা একটু বেশি হচ্ছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে (১ মার্চ) বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের প্রভাষক পদে তিন হাজার ৭৭টি পদ শূন্য রয়েছে। এত বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় সারাদেশে সরকারি কলেজসমূহে সুষ্ঠু পাঠদানসহ একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা বেশ সমস্যা হচ্ছে।’

জানা গেছে, কলেজের শিক্ষক সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে একটি বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে এক হাজার ২১০ জন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়ার জন্য গত ২৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন এই প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।

জানা গেছে, সরকারি কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা নিরসন করতে ১২ হাজার ৫৮৮টি নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ এক হাজার ৩৮৫টি, সহকারী অধ্যাপকের তিন হাজার ৩৬৫টি, সহযোগী অধ্যাপক চার হাজার ৩৫১টি এবং প্রভাষক তিন হাজার ৪৯৬টি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

সূত্র: দৈনিক সংবাদ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066421031951904