মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নে আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ সহিংস তাণ্ডবে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গাছবাড়ীয়া এলাকা। স্কুলে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গাছবাড়ীয়া এলাকায় একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও সংঘর্ষের প্রায় দেড় মাসপরও উপস্থিতি (৩য় শ্রেণিতে-৯ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে -১২ জন ও ৫ম শ্রেণিতে-৯ জন) মাত্র ৩০ জন। যারা এসেছে তারাও ভয়ে ভয়ে স্কুলে এসেছে। পরিবারের মাঝে আতঙ্ক এখনো বিরাজ করছে। পুলিশ বলেছে ভয় বা আতঙ্কের কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার বাধা দূর করে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে সদর উপজেলার পেয়ারপুরের গাছবাড়িয়া এলাকার ৭নং ওয়ার্ডোর ইউপি সদস্য শহীদ মাতুব্বরের সঙ্গে একই এলাকার লাল মিয়া মাতুব্বরের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে ২৪ সেপ্টম্বের মঙ্গলবার সকালে উভয়পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ গিয়ে ৮০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দু’জন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের ২৫ জন আহত হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই গ্রামে গত ২০ বছরে হত্যাকাণ্ড, সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ফসল নষ্ট করা হয়। এসব ঘটনায় সবসমই চরম বিপন্নের মুখে দাঁড়াতে হয় নারী-শিশু ও শিক্ষার্থীদের। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও আশ্বেস্ত হতে পারছেন না এলাকাবাসী।
এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার স্বামী প্রবাসী তারপর তার নামে একাধিক মামলা দিয়েছে এই মারামারি কারণে। আমাদের ঘর-বাড়ি কুপিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। আর পুরুষ যারা বাড়ি থাকবে তারা মারামারিতে ছিল না তারপরও পুলিশ ও সংঘর্ষের ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে আছে। এভাবে এই এলাকায় বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা কীভাবে ‘কার ভরশায়’ আমাদের ছোট সন্তানদের স্কুলে দেবো!
স্কুলে আসা ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার বাবা ও ভাই কেউ বাড়িতে নেই। আমাদের ঘরবাড়ি কুপিয়ে সব ভাংচুর করে ফেলেছে মারামারি সময়। এখন শুধু আমি ও আমার মা বাড়িতে ভয়ে ভয়ে থাকি। থাকা-খাওয়া সবকিছুতেই সমস্যা। তারপরও স্কুলে আসি আমি আমরা মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।
৮৭নং গাছাবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমি এলাকায় ঘুরে ঘুরে অভিবাবকদের সাহস দিয়েছি, তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্য। স্কুলে আপনাদের সন্তানের কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবে না। আর এখন আগের থেকে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে।
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. আব্দুল হান্নান জানান, যারা আসামি না, তাদের তো কোনোভয় নেই। আর শিক্ষার্থীরা কেন স্কুলে যাবে না। তাদের কিসের ভয়? তবে জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলাপ করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
মাদারীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাসির উদ্দিন জানান, আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে একটি ব্যবস্থা নেব।