বুয়েটে যে একজন মেধাবী ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হল, এটা সামগ্রিক অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় বলে আমি মনে করি। গর্হিত এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু ছাত্র বলে কথা না, যে কোনো নাগরিক, যে কোনো মানুষের ভিন্নমত থাকতেই পারে। তাই বলে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে! এ কোন দেশ, কোন সমাজে বসবাস করছি আমরা! বুধবার (৯ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় তো ভিন্নমত থাকবেই। এটাই তো ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও যুক্তিতর্ক দিয়ে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যকে বুঝিয়ে নিজের মতে নিয়ে আসার বিষয়টি শেখার জায়গা।
তাছাড়া আবরার যেভাবে বলেছেন, তার ভাষা তো পোলাইট ছিল। তার বক্তব্যের মধ্যে তো উগ্রতা দেখা যায়নি। এটাই তো তার ও অন্যদের মধ্যে পার্থক্য। সে ইতিহাস থেকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে একসময় কলকাতা বন্দর আমরা ব্যবহার করতে চাইলেও দেয়া হয়নি আর এখন আমাদের মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে চাইছে ভারত। নিজেদেরটা না দিলেও আমাদের একটি বন্দর ভারত ব্যবহার করতে চাইছে, এটা তো আমাদের জন্য গৌরবের।
আমরা ভারতকে ফেনী নদীর পানি ব্যবহার করতে দিয়েছি সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ত্রিপুরার সাবরুমে পানীয় জলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর ফেনী নদীর উৎপত্তি সাবরুমের কাছ থেকেই।
পরে খাগড়াছড়ি, ফেনী সীমান্ত এলাকা হয়ে এটি বাংলাদেশে এসেছে। নদীটি থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারত নেবে, এটা মানবিক। এটা সামান্য পানি। আবরার তুলনা করেছে তারা (ভারত) কিছুই দেয় না, আমরা কেন দিলাম। আমরা কী পাচ্ছি, কী দিচ্ছি- এটা তো তাকে বোঝানো যেত। কিন্তু না, তাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলা হল। এ কোন সভ্যতা, কোন মানবতা! বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় ভিন্নমতের সহনশীলতা থাকবে না- আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। করবেও সরকার, যাতে ভতিষ্যতেও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে না পারে। শুধু সরকারদলীয় লোকদের মাধ্যমে নয়, ভিন্নমতের কেউও যেন ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ কে আজাদ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়