দেশে আরও দুই থেকে তিন বছর নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ চলতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেছেন, দেশে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে করোনা থেকে মুক্তি নেই। বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে যা অনুমান করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, তা হলো কিছুদিন পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসতে পারে।
বক্তব্যের শুরুতে নিজেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন বলে জানান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, 'আমি নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ হয়ে উঠেছি'।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ বা অভিজ্ঞতা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশিদিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে না-ও থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। করোনাভাইরাস কেবল স্বাস্থ্যগত বিষয় নয়। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, ধর্ম, বাণিজ্য, জীবনের প্রায় সব উপযোগ্যকে ঘিরে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসায় বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি ২ হাজার চিকিৎসক ও ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। অন্যদিকে করোনাভাইরাস একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্কভাবে চলাফেরা এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে এ দেশে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন। কিন্তু দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়া এবং অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টি, রোগ বালাই এবং মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছুদিন পর বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের উচ্চহার কমে আসতে পারে। কিন্তু করোনার পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে আরও অনেক ব্যক্তি শনাক্ত হতে পারেন। অনেক মৃত ব্যক্তিও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে শনাক্ত হতে পারেন।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এই পরীক্ষার সুযোগ আরও বাড়াতে কাজ চলছে বলেও জানান মহাপরিচালক। বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায় পর্যন্ত আরটি-পিসিআর পরীক্ষা যত দ্রুতসম্ভব সম্প্রসারিত হবে। আরও নতুন নতুন, সহজে করা যায় এমন কোভিড পরীক্ষা চালু করা হবে। উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত এ ধরনের পরীক্ষা চালু করার প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতাল যেন কোভিড, নন-কোভিড সকল রোগীর ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বলে তাদের বিশেষভাবে সাবধান থাকার কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।