আসন সংকট আছে আসন সংকট নেই - দৈনিকশিক্ষা

আসন সংকট আছে আসন সংকট নেই

রাকিব উদ্দিন |

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা ২০১৮ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তিতে আসন সংকট নেই। তবে আসন সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যন ব্যুরো (বেনবেইস)। বেনবেইস বলছে, কিছুটা আসন সংকট হবে। আর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলছে, আসন সংকট নেই। যদিও গত দু’বছর ধরেই সাত লাখ ও ছয় লাখ করে আসন ফাঁকা ছিল। ন্যূনতম শিক্ষার্থী না পেয়ে বর্তমান তিন থেকে চারশ কলেজ বন্ধের উপক্রম রয়েছে।

আরও পড়ুন :কলেজে ভর্তি: শূন্য আসন সংখ্যায় গরমিল

রাজধানী ছাড়া সারাদেশে ভালোমানের পাঠদান হয়- এমন কলেজের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য মাধ্যমিকে ভালো ফলের পর দুশ্চিন্তায় একাদশ শ্রেণীতে ভালোমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে। কারণ যে সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, মানসম্মত বা কাক্সিক্ষত কলেজগুলোতে সে পরিমাণ আসন নেই। আবার ভালোমানের কলেজের বেশিরভাগই রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থিত।

বিভ্রান্তিকর তথ্য : এদিকে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে মোট আসন সংখ্যা নিয়ে দু’রকম তথ্য দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ব্যানবেইস এবং শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও উদ্বিগ্ন। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।

আরও পড়ুন: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা জারি

ব্যানবেইসের পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ  বলেন, ‘দেশে উচ্চ মাধ্যমিকে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ শাখায় রয়েছে প্রায় ১১ লাখ। মাদ্রাসায় রয়েছে এক লাখ আট হাজার। এ হিসাবে মোট আসন ঘাটতি থাকবে ২৯ হাজারের বেশি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক  বলেন, ‘ব্যানবেইস যে তথ্য দিচ্ছে তা সঠিক নয়। এগুলো পুরনো তথ্য। প্রকৃত তথ্য হলো- গত বছর যে পরিমাণ আসন ছিল, এবারও তাই আছে। একাদশ শ্রেণীতে আসনের কোন সংকট নেই। গত বছর বিপুলসংখ্যক আসন ফাঁকা ছিল।’

আরও পড়ুন: কারিগরি কলেজে ভর্তির আলাদা আবেদন

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখার তথ্যানুযায়ী, গত বছরের হিসাবে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন সারাদেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলেজ ও সমমানের কারিগরি ও মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে মোট আসন সংখ্যা ১৯ লাখ ৬৬ হাজার। আর এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে মোট ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকে আসন ফাঁকা থাকবে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৮৯৬টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর নামিদামি ৪০টি কলেজসহ সারাদেশের বিভাগীয় ও জেলা সদর মিলিয়ে মানসম্মত শতাধিক কলেজে একাদশ শ্রেণীতে আসন রয়েছে এক লাখ থেকে ৮০ হাজারের মতো। আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ দশ হাজার ৬২৯ জন। এ হিসাবে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েও প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অপেক্ষাকৃত ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর সারাদেশের অনুমোদিত কলেজে প্রায় ছয় লাখ আসন শূন্য ছিল। কোন শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় গত বছর প্রায় একশ কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। মাত্র ৫ থেকে ২০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তিন শতাধিক কলেজে। বাণিজ্যনির্ভর অনেক কলেজ গত বছর প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী পায়নি।

২০১৬ সালেও প্রায় ছয় লাখ ৬৪ হাজার আসন শূন্য ছিল। ২০১৫ সালে ৯টি শিক্ষা বোর্ডের ৫৬টি কলেজে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এবং প্রায় দেড়শ কলেজে দুই থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন শতাধিক। এর মধ্যে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৭৯টিসহ সারাদেশের শতাধিক কলেজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা বোর্ড।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, ভালো কলেজ হওয়ার ক্ষেত্রে যে ক্রাইটেরিয়া থাকা দরকার দেশের সিংহভাগ কলেজে তা নেই। ভালো কলেজের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, ভালো ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক, দক্ষ প্রশাসন। ভালো প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সচেতনতা ও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও রাখা আবশ্যক। এসব সুবিধা না থাকায় পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও অনেক কলেজ ভালো তালিকায় যেতে পারছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেও অনেক কলেজ ভালো পাঠদান করতে পারছে না। এছাড়া শিক্ষক স্বল্পতার কারণে দেশের সরকারি কলেজগুলো নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রমই পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে।

মেধার ভিত্তিতে ভর্তি

এবার একাদশ শ্রেণীতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মূল আসনে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। তবে বিশেষ অগ্রাধিকারের (কোটা) আবেদনকারী থাকলে মোট আসনের অতিরিক্ত (মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদর ৩ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতর ২ শতাংশ, বিকেএসপি শূন্য দশমিক ৫ এবং প্রবাসী শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

ভর্তি নীতিমালা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা ২০১৮ জারি করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সাকুল্যে মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ব্যতীত অন্য সকল মেট্রেপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।’

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। মেট্রেপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা গ্রহণ করা যাবে। তবে উন্নয়ন খাতে কোন প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।

ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ১৩ মে

ভর্তির জন্য অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৩ মে। অনলাইনে সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এতে নেয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এর জন্য ১২০ টাকা দিতে হবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোন শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না।

ভর্তির আবেদনের শেষ সময় ২৪ মে। তবে পুনর্নিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে, তাদের আবেদন আগামী ৫ ও ৬ জুন গ্রহণ করা হবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তবে ভর্তিতে আগের মতো এবারও স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবে। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। এরপর আরও একাধিক ধাপে ফল প্রকাশ, মাইগ্রেশনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কলেজসমূহে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি সংগ্রহ করবে। দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। এ নীতিমালার কোনরূপ ব্যত্যয় ঘটানো হলে বেসরকরি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজটির এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে। সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: সংবাদ

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048868656158447