আড়াই হাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক আটকে আছে সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষায় - দৈনিকশিক্ষা

আড়াই হাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক আটকে আছে সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর নভেম্বরে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই তারা ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে নিজেদের দেশসেবায় নিয়োজিত করতে পারেন। তবে উত্তীর্ণ না হলে এই শিক্ষার্থীদের প্রতিবছরের মে মাসে সাপ্লিমেন্ট প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসতে হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় প্রায় আড়াই হাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক তৈরির প্রক্রিয়া আটকে আছে। শুক্রবার (১৫ মে) বাংলাদেশ প্রতিদিনি পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, চিকিৎসক হওয়ার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুত এ সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা নিয়ে তাদের চলমান মহামারিতে দেশসেবার সুযোগ দেয়া হোক।

সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা বলছেন, মেডিকেল কলেজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মেডিকেল কলেজের গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষা বন্ধ থাকা উচিত নয়। এ ছাড়া কলেজভেদে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার্থী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খুব সহজেই এ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। করোনা মহামারীর এই সময়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা কোনোভাবেই উচিত নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট প্রায় ২ হাজার ৪০০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার প্রহর গুনছেন। এ অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে এই সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। পরীক্ষা নিতে সারা দেশের মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এই ছাত্র-ছাত্রীরা।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা পৃথি। তিনিও সাপ্লিমেন্ট প্রফেশনাল পরীক্ষার অপেক্ষা করছেন। গতকাল তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে ছয় মাস নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বন্ধুদের বেশির ভাগই বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা বিলম্বিত হলে আমরা পেশাগত জীবন থেকে এক বছর পিছিয়ে যাব। দ্রুত পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমরা রোগীদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে চাই।’

তথ্যমতে, ছয় মাস পরপর নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রফেশনাল পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এর ফলে মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে সেশনজটবিহীন। কিন্তু প্রফেনাল পরীক্ষা বিলম্বিত হলে মেডিকেল শিক্ষাও সেশনজটের কবলে পড়তে পারে। করোনা মহামারিতে আর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো সারা দেশের মেডিকেল কলেজও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা বলেন, অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিষয়টি একটু আলাদা। এ ছাড়া সব ইয়ারের প্রফেশনাল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার চেয়ে ফাইনাল ইয়ারের সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা ভিন্ন। কারণ অন্য বর্ষগুলোতে সাপ্লিমেন্ট থাকলেও পরের বর্ষে ক্লাস করা যায়। কিন্তু ফাইনাল ইয়ারে সাপ্লিমেন্ট থাকলে তাদের শিক্ষাজীবন, পেশাজীবন সব আটকে থাকে। এ ছাড়া অন্য প্রফেশনালের মতো কারিকুলাম সংশোধন করে এ ঘাটতি পূরণ করে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান বলেন, সেপ্টেম্বরে অন্য একটি ব্যাচের ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও ফাইনাল প্রফেশনাল ছাড়া নতুন ইন্টার্ন পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফলে হাসপাতালগুলোও ইন্টার্ন ডাক্তার সংকটে পড়বে। তাই এ সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা হওয়া জরুরি।

দিনাজপুরে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের দেলোয়ার হোসেন কাজল বলেন, ‘রোগীদের সবচেয়ে দুঃসময়ে চিকিৎসক তৈরির এ ধারা ব্যাহত হলে শুধু দীর্ঘ মেয়াদেই নয়, লোকবলের সংকট হতে পারে। তাই দ্রুত সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা নিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দেয়া হোক।’

অনতিবিলম্বে এমবিবিএস সাপ্লিমেন্ট প্রফেশনাল পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের রাকিব আল ফুয়াদ, খুলনা মেডিকেল কলেজের সৌমিত্র রায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অদিতি মোহন্তসহ অন্যরা। মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে থাকলেও পরীক্ষাসহ অন্য কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবী গতকাল বলেন, ‘চূড়ান্ত বর্ষের লিখিত পরীক্ষা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেয়া সম্ভব হলেও প্র্যাকটিকালগুলো এভাবে নেয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে হয়। কোনো কোনো হাসপাতাল তো এখন করোনা ভাইরাসের রোগীনির্ভর। আমরা তো শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।’ 
এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমরা এটিও চাই না যে, কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হোক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মাত্রই দ্রুত এ পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013994932174683