বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ১৪ টি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এর ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে অরাজকতা দূর করে দক্ষ ও মেধাবী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের দ্বার উন্মোচিত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির দৌরাত্ম্যে এই সৎ উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হয়। এরপরও শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ ম্যানেজিং কমিটি লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করে। তাদের এই ব্যবসার কারণে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক পাওয়া ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে । ঠিক এই মুহূর্তে সরকার এনটিআরসিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করার ক্ষমতা দেয়। দায়িত্ব পেয়েই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচ্ছেতাই অবস্থার সৃষ্টি করে। একই প্রার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত হয়ে অন্য নিবন্ধিত প্রার্থীর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদ থেকেই যায়। বঞ্চিত হয় হাজার হাজার উচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করা শিক্ষক নিবন্ধনধারী। এরপরেই নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধনধারীরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে একজোট হয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদ গঠন করে হাইকোর্টে দুই শতাধিক মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্ট গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে এনটিআরসিএ এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়কে জাতীয় সমন্বিত মেধাতালিকা করে পিটিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। আদালত এও আদেশ দেন, নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তরা নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ বৈধ থাকবে এবং রায়ের ৭ নং আদেশে আরো বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে সরকারের একটি নির্দিষ্ট বয়স করা উচিত।
হাইকোর্টের রায় মোতাবেক এনটিআরসিএ তার কার্যক্রম শুরু করলেও সাধারণ নিবন্ধিতরা আশ্বস্ত হতে পারেনি। এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ দফায় দফায় অনেক সভা করে এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষামন্ত্রণালয় এমপিও নীতিমালা/২০১৮ প্রণয়ন করে। এতে লেখা আছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়সের সময়সীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। এরপর কেউ এমপিও ভুক্ত হতে পারবে না। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নীতিমালাটি প্রকৃত অর্থে কারো কাছে সুস্পষ্টভাবে বোধগম্য হচ্ছে না। ফলে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধিত প্রার্থীরা আবারও আদালতে দ্বারস্থ হতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়।
এদিকে শূন্য পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ই-রিকুইজিশনের সময় তিনদফায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এনটিআরসিএ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করে। নিবন্ধনধারীদের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতটি পদ, বর্তমানে কতজন বহাল, শূন্যপদসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত আছে। তাহলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ কেন শিক্ষাপ্রধানদের শূন্যপদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবে? যদি করতেই হয়, তাহলে তো নির্দেশ দেবে কিন্তু অনুরোধ কেন? তবে এটা আরো সহজ হতো যদি মাউশি, এনটিআরসিএ এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করত। সমন্বিত উদ্যোগে এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া অসম্ভব নয়। তাহলে ই-রিকুইজিশন দিতে এক মাসের অধিককাল সময়ক্ষেপণ ছাড়া কী হতে পারে? এনটিআরসিএর এই অহেতুক বিলম্বে সাধারণ নিবন্ধনপ্রাপ্তরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগে প্রতিষ্ঠানটির সদিচ্ছার অভাব দেখতে পাচ্ছে। এ কারণে বঞ্চিত শিক্ষক নিবন্ধিতরা নিয়োগ সুপারিশে স্বচ্ছতার জন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছে।
লেখক : অধ্যক্ষ, সাইডীরিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, খানসামা, দিনাজপুর।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]