বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিযোগটি তদন্তে গঠিত মন্ত্রণালয়ের কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ৬ মে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ইউজিসির সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদের মেয়ে সাদিয়া শারমিন সিনথিয়া সহকারী পরিচালক পদে প্রার্থী থাকার পরও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সচিব সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। নিজের মেয়ের প্রার্থিতার বিষয়টি গোপন করে নিয়োগ কমিটিতে নিজের নাম লেখান ড. মোহাম্মদ খালেদ। পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন তিনি।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর খাতা মূল্যায়নসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া থেকে ইউজিসির একজন সদস্য বাদে বাকিরা নিজেদের সরিয়ে নেন। এ ঘটনার পর চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীদের পক্ষে কয়েকজন অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে ১৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দেন প্রার্থীরা।
অভিযোগে প্রার্থীরা বলেন, সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া অযথা ৬ মাস আটকে রাখার পর গত ২১ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা হয়। পুরো পরীক্ষা সচিবের একক নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ নিয়োগে ইউজিসির বাইরে কয়েকজন সদস্য রাখা এবং বাইরে কোথাও পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেও ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা।
প্রার্থীদের অভিযোগ, অনুগত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির অধীন লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি এবং খাতা দেখার কাজ করেন সচিব। মেয়ের পাস নিশ্চিত করতে কমিশনে তার অনুগত ব্যক্তিকে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই পরীক্ষায় সচিবের মেয়ে পাসও করেন।
এ প্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লাকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মাহমুদুল হাসান। সম্প্রতি অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটির মতামতে বলা হয়, ইউজিসির সচিবের কন্যা সহকারী পরিচালক পদে চাকরিপ্রার্থী- এ বিষয়টি যাচাই না করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি ও হল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি স্বচ্ছতা বা সুশাসনের সাথে সমান্তরাল নয়। এ ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় অন্তভুক্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখা ইউজিসির সচিব ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লার জন্য সমীচীন হতো। তা না করায় নৈতিকতা নিরীখের ক্ষেত্রে সচিবের ভূমিকা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
তদন্ত কমিটির মতামতে আরও বলা হয়, বাছাই প্রক্রিয়া বস্তুনিষ্ঠ হয়নি। বাছাই কমিটি কর্তৃক আবেদনপত্রগুলো যাচাই বাছাই ত্রুটিপূর্ণ এবং যথেষ্ট যৌক্তিক নয়-এমন নীতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় অনেক আবেদনকারী প্রার্থীতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কমিটি আরও জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পরীক্ষা কমিটি গঠন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে কমিশনের বিদ্যমান রেওয়াজের ব্যত্যয় করা হয়েছে। তাই পুরো বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মতামতে আরও বলা হয়, উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। এ ধরনের মূল্যায়ন যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায়। নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন হবার সুযোগ নেই।
এ প্রেক্ষিতে ইউজিসির নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির মতামত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে।