চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন মাস ধরে একটি অদক্ষ প্রশাসন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। উপাচার্যের দপ্তরের ফাইল দেখভাল করছেন চার জন শিক্ষক। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে নেই। প্রতিনিয়ত তারা উপাচার্য দপ্তরে সময় দিচ্ছেন। কোনো কর্মকর্তা ফাইল নিয়ে উপাচার্য দপ্তরে গেলেই ঐ শিক্ষকদের আগে দেখাতে হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
মূলত, উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার অতীতে কখনো বিভাগীয় সভাপতি, ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন না করায় একটি সিন্ডিকেট এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফায়দা নিচ্ছে।
জানা গেছে, গত ১৩ জুন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর দায়িত্ব শেষ হওয়ার একদিন আগেই উপাচার্য হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে বসেন ড. শিরীণ আখতার। সরকার নিয়োগ না দিলেও উপাচার্য পদে যোগদান করে স্বাক্ষর করেন। শুধু তাই নয়, উপাচার্য পদে ড. ইফতেখার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় উপাচার্যের জন্য নির্ধারিত পাজেরো জিপ নিজের ব্যবহারের জন্য নিয়ে নেন তিনি। রুটিন দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রশাসনিক পদে রদবদল ও নিয়োগ দেয়ার বিধান না থাকলেও তিনি এ পর্যন্ত পাঁচ জন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছেন।
ড. শিরীণ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে চট্টগ্রামের অভিজাত রেস্টুরেন্টে বিল প্রদান করা হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার হন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম। তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক হানিফ মিয়া। তাকে গত ৫ সেপ্টেম্বর চবির সহকারী প্রক্টর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঐ সময় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম শিক্ষক নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক হিসেবে। যিনি বনে গেছেন ড. শিরীণের প্রশাসনের নীতিনির্ধারকদের একজন।
অন্যদিকে চবিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে নজিরবিহীনভাবে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের। আওয়ামীপন্থি অধ্যাপক গোলাম কবিরকে বিভাগীয় সভাপতির পদ থেকে কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অপসারণ করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঐ বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন খোদ ড. শিরীণ।
ড. শিরীণের দায়িত্ব নেয়ার সুযোগে চবি ক্যাম্পাসে বিশেষ ব্যবস্থায় সেমিনার করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর হামিদুর রহমান আজাদ। ড. শিরীণের দায়িত্ব গ্রহণের ছয় দিনের মাথায় এ সেমিনার আয়োজন করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। ড. শিরীণ ও হামিদুর রহমান আজাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলায় হওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখলকারীরাও সক্রিয় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে নির্মিত সীমানাপ্রাচীর ভেঙে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থান থেকে খুলে নেয়া হয়েছে সীমানাপ্রাচীরের লোহার গ্রিল। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে দেখা গেছে ড. শিরীণকে।