উৎসবের আমেজে প্রাথমিকে বিশেষ দিবস উদযাপিত হউক - দৈনিকশিক্ষা

উৎসবের আমেজে প্রাথমিকে বিশেষ দিবস উদযাপিত হউক

মো: সিদ্দিকুর রহমান |

বাঙালির হাজারো বছরে প্রাচীনতম প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের চিরাচরিত ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের দিন ছাড়া বাঙালি জাতির রয়েছে বিশেষ গৌরবময় দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবময় সংগ্রামী ইতিহাস অন্য কোনো জাতির নেই। পৃথিবীতে ভাষার জন্য আর কোন জাতিকে রক্ত দিয়ে মর্যাদা অর্জন করতে হয়নি। আজ মহান একুশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্থান পেয়েছে। একুশের শহীদদের মহান আত্মত্যাগে এবং একাত্তরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বাঙালি অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এ স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালির স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ২৫শে মার্চের বিভিষীকাময় গণহত্যা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মাঝে জাতির সংগ্রামী স্বাধীনতার ইতিহাস লুকায়িত আছে।

বাঙালি জাতির গর্ব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন বা জাতীয় শিশু দিবস ছাড়া বাঙালি জাতির জনকের বিয়োগান্ত জাতীয় শোক দিবসসহ সকল দিবসের তাৎপর্য, ঘটনা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জানা প্রয়োজন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্কুলে জঙ্গিবাদ বিরোধী কাউন্সিলিং নি:সন্দেহে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বাঙালি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি সম্পর্কে বিশদভাবে জানা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। তাদের ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ। এ ভালোবাসা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক শিশু তাদের ধর্ম-কর্ম, আচার-অনুষ্ঠান পালন করবে। ধর্ম-কর্ম আচার অনুষ্ঠান পৃথক হলেও উৎসব সকলের। এর মাধ্যমে সকলের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও  ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হবে।

ধর্মীয় উৎসব ব্যতিরেকে বাঙালি জাতীয় দিবস বা বিশেষ দিবস একসাথে উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করে আসছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের সময়েও স্বাধীনতার ঘৃণ্য শত্রুরা অভ্যন্তরে থেকে বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ভালভাবে না জানাতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অনুভব করেছিল বাঙালি জাতিকে নিশ্চিন্ন করতে হলে সর্বাগ্রে মেধাশূন্য করতে হবে। সে লক্ষ্যে তারা দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে ধরে নিয়ে হত্যা করে। সে ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে সামনে রেখে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। অথচ আজকের প্রজন্ম বুদ্ধিজীবী দিবসের ঘটনা, তাৎপর্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারছে না।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সরকারের আমলে প্রশাসনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা একটি ঘৃণ্য চক্র জাতীয় দিবস বা গুরুত্বপূর্ণ দিবসকে ছুটির তালিকায় ছুটি দেখায়। ছুটি থাকায় শিক্ষকরা উক্ত দিবস পালনে আন্তরিকতার পরিবর্তে বিরুপ মনোভাব নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকদের উপস্থিতি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শহরাঞ্চলে নগণ্য হলেও গ্রামাঞ্চলে উপস্থিতি নাই বললেই চলে। তার অন্যতম কারণ ছুটি থাকায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। নাম ডেকে উপস্থিতি দেখানো হয় না। শিক্ষকদের হাজিরা খাতা স্বাক্ষরের পরিবর্তে ছুটি দেখানো হয়। তাই স্বল্প সময় কোথায় কোথায় দায়সারাভাবে উৎসববিহীন বিষন্নমনে শিক্ষকদের দিবসসমূহ পালন করতে দেখা যায়।

দিবসগুলোর ঘটনা, তাৎপর্য ও সংগ্রামী ইতিহাস শিশুদের জানানোর জন্য ছুটি না রেখে কর্মদিবস ঘোষণা করে ১৫ দিন করা। এর মাধ্যমে অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর মত প্রাথমিকের শিক্ষকেরা তিন বছর পর পর শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাবে। দিবসগুলো কর্মদিবস ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বাধীনতার ইতিহাস জানার অধিকার ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রম সুদৃঢ় হবে। শিক্ষকেরা পাবে সরকারি কর্মচারীর মত শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রাপ্তির অধিকার।

দিবসগুলো কর্মদিবস ঘোষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থী শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত করে প্রাথমিকে দিবস পালন উৎসবমুখর হোক। এ প্রত্যাশা কী অযোক্তিক? প্রাথমিক শিক্ষকেরা তো বাড়তি অর্থ ও ছুটির তালিকায় নির্ধারিত ছুটির বেশি দাবী করছেনা। তাহলে কোন দৃষ্টিকোন থেকে প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে অনাহুত সময়ক্ষেপণ করে মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন? শিগ্গির মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষার নিকট প্রেরিত আবেদন কার্যকরের ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদী।

সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠুক দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে উৎসবমূখর পরিবেশে জাতীয় দিবসসহ বিশেষ দিবস পালন হোক এ প্রত্যাশা।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081768035888672