এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হারের পাশাপাশি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমলেও এ ফলাফলকেই ‘বাস্তবসম্মত’ বলে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা।
তারা বলছেন, পাসের হার বাড়তে বাড়তে মান নিয়ে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, প্রশ্নফাঁসের বিস্তারে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে অনাস্থা তৈরি হচ্ছিল, এবারের ফলাফলে সেসব কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফেরার আভাস তারা পাচ্ছেন।
আর অনেক চেষ্টার পর পাবলিক পরীক্ষায় কার্যকরভাবে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কথায় প্রকাশ পেয়েছে স্বস্তি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এইবার পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্রটির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেউ কোথাও উত্থাপন করেননি। এইবারের পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগ কারো ছিল না, কেউ করেনি।”
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৭২৬ জন।
শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে এবার পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোয় এবং অভিন্ন প্রশ্নে সারা দেশে এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা হওয়ায় ফলাফলে প্রভাব পড়েছে।
তবে একে খারাপ ফলাফল বলতে রাজি নন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। তার ভাষায়, পাসের হার কিছুটা কমে ধীরে ধীরে ‘স্থিতি’ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, “পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পৃথিবীর সর্বত্র ওঠানামা করে, এটা সর্বত্র বাড়তে থাকে না। আগে আমাদের একটা অস্বাভাবিক ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল… এখন এটা স্ট্যাবিলাইজড হচ্ছে।”
গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগের রাতে ও পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফেইসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য হয়ে উঠেছিল বড় দুশ্চিন্তার কারণ।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টির এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল বলে সরকারের তদন্ত কমিটি প্রমাণ পায়।
এই প্রেক্ষাপটে কঠোর সমালোচনার মুখে এবার উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজায় সরকার। প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ ছাড়াই শেষ হয় পরীক্ষা।
বৃহস্পতিবার সকালে ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে এখন যেভাবে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেই সময় কমিয়ে আনা গেলে পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে ‘গুজব ও অপপ্রচারও’ কমে আসবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হককে বলেন, “সার্বিকভাবে ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা যে একটা গুণগত পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছি এটা তার একটা সূচনা।”
তিনি জানান, ঢাকা বোর্ডে এবার আইসিটিতে ৮২ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, গতবার যা ৮৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিল।
গত বছর পদার্থ বিজ্ঞানে ৯২ দশমিক ১৭ পাস করলেও এবার করেছে ৮৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। উচ্চতর গণিতে গতবার পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, এবার ৮৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
জিয়াউল হক বলেন, “পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার অনেক ভালো ছিল, এ কারণে পাসের হার কিছুটা কমতে পারে।”