এক ডিআইএ কর্মকর্তার স্ত্রীর অঢেল টাকা, ছালেহর প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত - Dainikshiksha

এক ডিআইএ কর্মকর্তার স্ত্রীর অঢেল টাকা, ছালেহর প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

তিনি একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে শ্রেণিকক্ষের সাথে তার যোগাযোগ নেই। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) কর্মরত। গত বছর তার সম্পদের হিসেব চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কয়েকদফা সময় নিয়ে দুদকে জমা দেয়া সম্পদের হিসাবে গড়মিল। একজন সরকারি কলেজ শিক্ষক যিনি প্রাইভেট টিউশনিও করান না, কোচিং সেন্টারও চালান না, পৈত্রিক কোনো সম্পদ-সম্পত্তিও ছিলো না, তবু তার এত টাকা! এত ব্যবসা! এই অঢেল টাকার উৎস জানতে চেয়েছে দুদক। কয়েকদফা সময় নিয়ে উৎসের কথা জানালেও অধিকতর অনুসন্ধান করবে দুদক। তার স্ত্রীর কোনো আয় নেই। তবু এত টাকা কোথা থেকে?    

 ছালেহ উদ্দিন শেখ

এদিকে ওএসডিতে থাকা ডিআইএর অপর এক কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন শেখকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম তদন্ত ও পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর পদোন্নতি পাওয়ায় পর  বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ছালেহর চাকরি ন্যস্ত করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে। সেই থেকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে অধিদপ্তর থেকে সালেহ বেতন-ভাতা নেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রশ্নবিদ্ধ আদেশে সালেহকে ডিআইএর স্বপদে থাকতে এবং শিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডি থেকে বেতন নিতে বলা হয়। পদোন্নতি পাওয়ামাত্রই অন্যত্র বদলি করার নিয়ম থাকলেও তা মানছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই না মানার পেছনেও একক ভূমিকা কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষা ক্যাডার থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হওয়া এবং মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে কর্মরত একজন বিতর্কিত কর্মকর্তার।   

মোঃ আলমগীর হাসান

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, নজির না থাকলেও সালেহকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি-অনিয়ম ধরতে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে ডিআইএ থেকে। মাঠে পরিদর্শন ও তদন্তের জন্য ভাতা পাবেন ছালেহ। কিন্তু সেই ভাতা কে দেবে, মাউশি অধিদপ্তর না-কি ডিআইএ? বেতন পান মাউশি অধিদপ্তর থেকে আর টিএ পাবেন ডিআইএ থেকে- এমন নজিরবিহীন ঘটনা কখনো দেখেননি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয়ের সেই অতিরিক্ত সচিবের ইশারায় ছালেহকে পরিদর্শনে পাঠানো নিয়ে নানা প্রশ্ন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মনে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পদোন্নতি দিয়ে ওএসডি করে স্বপদে বহাল রাখায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের পুরোটা সময় পরিদর্শনে পাঠানো থেকে বিরত রাখা হয় ডিআইএর শ্যামা প্রসাদ সাহা, সিদ্দিকুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদকে। তারা পরিদর্শনে যেতে চাইলেও আইন ও বিধি-বিধানের দোহাই দিয়ে আটকে দেয়া হয়। কিন্তু ছালেহ উদ্দিনের বেলায় বিধি-বিধান কখনো শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে, আবার কখনো মতামতের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অডিটর জেনারেল অফিসে চিঠি লেখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ছালেহ ফের আলোচনায়। এর আগে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দেও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সেবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তদন্তে গিয়ে মোটা অংকের ঘুষ নেন ছালেহ। তার সঙ্গে ছিলেন অডিট অফিসার মোখলেছুর রহমান। ঘুষ দেয়া নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ঝগড়াঝাটিতে মারা যান অন্যতম ঘুষদাতা একজন শিক্ষক। মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা হয় ছালেহর ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে। ‘নিজেদের লোক’ দিয়ে তদন্ত করে  সেই যাত্রায় অভিযোগ থেকে রেহাই পান ছালেহ। তাকে বদলি করা হয় কলেজে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ফের বদলি হয়ে আসেন ডিআইএতে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএর সাবেক একজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ছালেহ শেখ সৌভাগ্যবান। ওএসডি থাকা অবস্থায় তদন্ত ও পরিদর্শনে যেতে পারছেন। কিন্তু আমরা পারিনি। আমরাও একইভাবে ওএসডি ছিলাম। শিক্ষা প্রশাসনের আলোচিত ‘জালালী হাতের’ ইশারায় আমাদেরকে পরিদর্শনে বিরত রাখা হয়েছিল, আবার সেই ‘জালালী হাতেরই’ ইশারায় ছালেহ পরিদর্শন করে যাচ্ছেন! গতমাসে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ১০ প্রতিষ্ঠানে অডিট করেছেন ছালেহ। গত সপ্তাহে করেছেন ফেনীর ফুলগাজীর দশ স্কুল-কলেজ-মাদরাসা।
   
জানতে চাইলে ডিআইএর উপপরিচালক রসময় কীর্ত্তনীয়া বলেন, ছালেহ উদ্দিনকে পরিদর্শনে পাঠানোর বিষয়ে মতামত জানতে এজি অফিসে চিঠি দিয়েছেন আমাদের পরিচালক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। একাই দুই বিভাগের উপপরিচালকের দায়িত্বে থাকা রসময়ের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

ছালেহ উদ্দিন বলেন, আমাকে পরিদর্শনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত অফিসের। অফিসের সিদ্ধান্তে আমি কাজ করছি।  

এদিকে আলমগীর হাসান নামে ডিআইএর অপর একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার পঞ্চগড় সদরের দশটি স্কুল ও মাদরাসা পরিদর্শন যান আলমগীর। পরিদর্শনশেষে দশ প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে একমাসের এমপিওর পুরো টাকা দাবি করেছেন আলমগীর।টাকা না দিলে ‘খারাপ’ রিপোর্ট দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। দৈনিক শিক্ষার কাছে এমন অভিযোগ করেছেন ওই দশ প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক।অভিযুক্ত আলমগীরও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। 

মতামতের জন্য কয়েকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তা রিসিভ করেননি আলমগীর। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076570510864258