এক স্কুলের তিন শিক্ষকের ডাবল চাকরি! - দৈনিকশিক্ষা

এক স্কুলের তিন শিক্ষকের ডাবল চাকরি!

মুরাদ মজুমদার, ঢাকা ও মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা |

সদ্য সরকারিকৃত একটি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন প্রভাষক মোট ছয়টি চাকরি করেন। দুইজন শিক্ষকতা করেন দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর অপরজন একটি এমপিওভুক্ত মাদরাসায়। এই তিনজনই বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা সদরের সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাষক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটিতে একাদশ শ্রেণি খোলার পর তারা নিয়োগ পেয়েছেন। এই তিন শিক্ষকের ডাবল চাকরির বিষয়টি বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলা শিক্ষা অফিস এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। স্থানীয়রা শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এ বিষয়টি উঠে আসে। সারওয়ারজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এএসএম হারুন অর রশিদও বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে স্বীকার করেছেন। সরকারি তহবিলের এমন তছরুপ হলেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে  বলেন, ডাবল চাকরির বিষয়টি লিখিতভাবে স্থানীয় শিক্ষা অফিস এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। 

ডাবল চাকরি করা শিক্ষকরা হলেন সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাষক মো. মুছা মোল্লা, মো. রবিউজ্জামান এবং  মো. মিজানুর রহমান। এরা তিনজনই রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। যদিও একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার বিধান পরিপন্থী। এছাড়া অনৈতিকও বটে। সরকারি বিধান উপেক্ষা করেই আর্থিক সুবিধা লাভের আশায় দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তারা। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

অভিযুক্ত এই তিন শিক্ষক সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পান ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানের অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তখন মোট ৮ জন প্রভাষক নিয়োগ দিয়েছিল। আর প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর সরকারিকরণ করা হয়।

একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও আর্থিক সুযোগ নেয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এএসএম হারুন অর রশিদ। অনিয়ম তদন্তের চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিদর্শক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে।

 

জানা গেছে, সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক মো. মিজানুর রহমান কাঠালিয়া উপজেলার আমুয়া চাঁদ মিয়া এসআর ফাজিল মাদরাসার ইংরেজির শিক্ষক। ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক মো. মুছা মোল্লা  একই উপজেলার ঘোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং পৌরনীতি বিষয়ের প্রভাষক মো. রবিউজ্জামান একই উপজেলার বলইবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তারা দুটি প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করছেন। মাদরাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাবলিক পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন, খাতা মূল্যায়নসহ সব দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানোর পরও প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
 
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিধান অনুযায়ী কোনও শিক্ষক বা কর্মচারী একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে (এমপিওভুক্ত বা এমপিওবিহীন যে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠান) চাকরিরত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও শিক্ষক বা কর্মচারী একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে উভয় প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়ী থাকবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভাষক মো. মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। আমি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি না। আগে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। কিন্তু এখন যাই না। তবে, কবে পদত্যাগ করেছেন সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।

আমুয়া চাঁদ মিয়া এসআর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মিজানুর রহমান অন্য কোথাও চাকরি করেন কিনা তা জানি না। তবে মাদরাসার হাজিরা খাতায় প্রতিদিনই তার স্বাক্ষর রয়েছে এবং তিনি রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।

সারওয়ারজান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এএসএম হারুন অর রশিদ বলেন, একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির ঘটনা লিখিতভাবে মহাপরিচালককে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

বরগুনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বামনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040299892425537