এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ সাহার ঘুষ বাণিজ্য : দুদকের তদন্ত শুরু - দৈনিকশিক্ষা

এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ সাহার ঘুষ বাণিজ্য : দুদকের তদন্ত শুরু

নোমান সরকার |

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য এনসিটিবির কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়েছে দুদক।

সম্প্রতি এনসিটিবিতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে উঠেছে। অভিযোগ তদন্তে দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে চেয়ারম্যানকে এনসিটিবি বোর্ডের প্রবিধানমালা, এম.এল (চার্টার অব ডিউটিস) কমিটি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট ও অনুমোদনের টিঠিসহ বাজেটের কপি, বাজেট কর্তনের রেজিস্ট্রার, ৩২০ নম্বর দরপত্রের নির্দেশিকা, ৩৪০ নম্বর টেন্ডার সিডিউল, প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক টেন্ডার সিডিউল ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন (টইসি) সহ অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে তদন্ত কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদে প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রায় ৪ বছর ধরে কর্মরত আছেন।

২০২০ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবারহে ৩২০ নম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে প্রতি সেট বইয়ের দাম ধরা হয় ২ হাজার টাকা।

অপরদিকে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ (গদ্য ও কবিতা), সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) ও English For Today এই তিনটি বই মুদ্রণ ও বাজারজাত করার জন্য নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে অবস্থিত চৌমুহনী স্টেশন রোডস্থ অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এনসিটিবি। এ বিষয়ে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুন একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত রয়্যালিটির বিনিময়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পর্যন্ত অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসকে ওই ৩টি বই মুদ্রণ ও বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ছাপানো বই ব্যতীত অন্য কোনো প্রেসের মুদ্রিত বই না কিনতে অনুরোধ করা হয় শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণ

মাধ্যমিকে বিভাগ তুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা এনসিটিবির

পাঠ্যপুস্তকে অনিয়ম-দুর্নীতি

এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ নভেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় উঠে আসে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। গবেষণায় বলা হয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের মতাদর্শীদের প্রাধান্য দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার প্রসঙ্গও আনা হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, কিছু  ক্ষেত্রে লেখা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের প্রভাবের চিত্র উঠে আসে। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়।

দরপত্র নিয়ে টিআইবি জানায়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের একাংশ পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বানের আগেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাক্কলিত দর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দরপত্র দাখিল করে।

এছাড়া, পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে এনসিটিবির বিরুদ্ধে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫ কোটি নতুন বই পৌঁছে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। সেসব বইয়ের কাগজের প্রায় ৬০ শতাংশই নিম্নমানের। আন্তর্জাতিক মান মোতাবেক একটি পাঠ্যবইয়ের কাগজে যে পরিমাণ ব্রাইটনেস থাকা দরকার সেটি থাকছে না। দরপত্রের কারিগরি নির্দেশনা ও নিয়ম মোতাবেক ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) থাকা দরকার ৮৫ শতাংশ। কিন্তু রয়েছে মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। একইভাবে কাগজের পুরুত্ব (জিএসএম) ৬০ থেকে ৬৪ শতাংশের মধ্যে থাকার কথা থাকলেও নমুনায় আছে অনেক কম। আর ব্যবহৃত কাগজ কতখানি মজবুত তার নির্দেশনাকারী ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ যেখানে ন্যূনতম ১২ শতাংশ থাকার কথা, তা আছে ৭-৮ শতাংশ।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039019584655762