এবারও হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

এবারও হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

১৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের পরীক্ষা। অনার্স ভর্তিযুদ্ধে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে পাস করা লাখ লাখ পরীক্ষার্থীকে। তবে আশার সঞ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত এবারও হচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল কলেজের মতো একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষাও হচ্ছে না এবার। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, আগামী বছর থেকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করি।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো এবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে ছিল। মন্ত্রণালয়ের চেষ্টার পর বিশ^বিদ্যালয় পরিষদও একটি বৈঠক করে নিজেদের মধ্যে। কিন্তু তাতে অগ্রগতি খুব একটা নেই। ছোট দু’একটি বিশ^বিদ্যালয় ইতিবাচকভাবে দেখলেও উদ্যোগে সাড়া নেই বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের। এবার উচ্চ মাধ্যমিকের এ পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই)  জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

পাস করেছে প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। বুধবার ফল প্রকাশের পর এখন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দুশ্চিন্তা এবারও কি অনার্স ভর্তির জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য দৌড়াতে হবে? নাকি মেডিক্যালের মতো একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা হবে? অন্তত একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে একই সঙ্গে পরীক্ষা হবে কি?

শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থী ভর্তিতে আগামী বছর থেকে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু করা সম্ভব হবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সমস্যা হচ্ছে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তারা নিজেরা নিজেদের পরীক্ষা নিতে চায়। তবে উপাচার্যদের একটি পরিষদ আছে, তারা আলাপ-আলোচনা করছেন, আশা করছি এ বছরের মধ্যে ইতিবাচক ফল পাব। আগামী বছর থেকে আমরা একেবারে সব বিশ্ববিদ্যালয় না হলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই ব্যবস্থাটি চালু করতে পারব বলে আশা করছি।

বর্তমান ব্যবস্থায় ভর্তির প্রক্রিয়ার সমস্যার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে। আমরা শুনেছি ছাত্ররা রাতে থাকার জায়গা না পেয়ে মসজিদে অবস্থান করে। আর মেয়েরাতো তাও পারে না। সরকারী-বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই সবার ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা আশা করছি। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ইতিবাচক ফল পাব।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি চালুর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লাভ-লোকসানের বিষয় আছে সেটা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়াটি সহজ করা। একজন শিক্ষার্থী পাঁচটি বা সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে সারাদেশে ছুটে বেড়াচ্ছে। এটা কঠিন। যাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাদের তো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তুলে সারাদেশে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দেয়া কঠিন। এসব শিক্ষার্থী সঙ্কটের মধ্যে পড়ে যাবে সেটা কাম্য নয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কথা বলে আগে জানা গেছে, মূলত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তির কারণে গেল বছরের মতো এবারও ভেস্তে গেছে এ প্রক্রিয়া।

আগের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কয়েক বছর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় শোনতে রাজি হয়নি। তিনি সব সময়েই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা গ্রহণ না করে নিজস্ব নিয়মেই পরীক্ষা নেয় তাহলে করার কিছু নেই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিলে আমরা সব ধরনের সমর্থন দেব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের জোরও করতে পারি না। কোন সিদ্ধান্ত আমরা তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নেতারা বলছেন, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট নিজেদের স্বতন্ত্র মান বজায় রাখতে চায়। একই কথা মত দিয়েছেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও।

এর আগে ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুসারে ২০১৫ সালে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও বলা হয়েছিল পরবর্তী (২০১৬) বছর থেকে শুরু হতে পারে। কিন্তু এবার কোন বিশ্ববিদ্যালয় সে ওয়াদা পূরণ করেনি আজও।

এক পর্যায়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান ভর্তি পদ্ধতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কারণে প্রতি বছর কোচিং সেন্টারগুলো ৩২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের বহু টাকা ব্যয় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সংসদে পাস করা আইন দিয়ে পরিচালিত হয় বিধায় তাদের আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না।

বহুদিন ধরে আলোচনা হলেও গুচ্ছভিত্তিক ভার্তি পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগে সম্পর্কে জানা গেছে, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি কমিটি, পাঁচটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি এবং চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটিসহ মোট তিনটি কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২০১৩ সালে।

এছাড়া গঠন করা হয়েছিল একটি কেন্দ্রীয় কমিটি। পরিকল্পনা অনুসারে, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে গ্রহণ করার পরিকল্পনা ছিল। এ ক্ষেত্রে অনুষদভিত্তিক চারটি থেকে পাঁচটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে নেয়ার চিন্তা ছিল। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল।

উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্ট্রাডিজ পলিসি ইউনিট কর্তৃক বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার ওপর একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণা কার্যক্রমের ২০২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ১১৩ জন ভর্তিচ্ছু, ২৯২ জন শিক্ষার্থী, ১৩৯ জন অভিভাবকের কাছ থেকে প্রশ্নমালার মাধ্যমে মতামত সংগ্রহ করা হয়। গৃহীত মতামতের ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও ইউজিসির সমন্বয়ে ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। যেখান থেকেও উঠে আসে বেশকিছু গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার নানা পরিকল্পনা।

এছাড়া ২০১২ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়ার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল উল্লেখ করে এতে আমূল সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছিল। বিদ্যমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের একাধিক ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন, মানসিক চাপের মধ্যে থাকার বিষয়টি উঠে আসে। নিজস্ব পদ্ধতিতে পৃথক দিনে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেয়ায় অক্টোবর থেকে কমপক্ষে চার মাস ধরে চলে ভর্তি প্রক্রিয়া। এই দীর্ঘ সময়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে একজন শিক্ষার্থী, তার অভিভাবককে ব্যয় করতে হয় মূল্যবান সময় ও অর্থ। শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি নতুন নতুন স্থানে পরীক্ষা দিতে গিয়ে নানা রকম মানসিক চাপে থাকেন এইচএসসি উত্তীর্ণরা।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078399181365967