এমপিও জালিয়াতচক্র ধরতে সিআইডিকে চিঠি - দৈনিকশিক্ষা

এমপিও জালিয়াতচক্র ধরতে সিআইডিকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিজেদের মতো করে চিঠি লিখে পাঁচ জন শিক্ষকের স্থগিত থাকা এমপিও ছাড়করণের  চেষ্টায় জড়িতরা এবার পাকড়াও হচ্ছেন। জালিয়াতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডিকে চিঠি পাঠিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। একটি চক্র কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভুরারঘাট বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেনসহ ৫ শিক্ষকের স্থগিত এমপিও ছাড়ের চেষ্টা করেছিল। জালিয়াত চক্রটি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি কমিশনার এবং সিআইডির এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেলকে বলা হয়েছে। আর জালিয়াত চক্রটি চিহ্নিত করতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এবং সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিকেও চিঠি পাঠিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের একটি চক্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বরখাস্ত হওয়া ৫ জন শিক্ষকের স্থগিত থাকা এমপিও ছাড় করার চেষ্টা করে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভুরারঘাট বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন, সহকারী মৌলভী মোবাশ্বেরা মাহমুদা, সহকারী শিক্ষক নাজমা বেগম, আতিকুর রহমান এবং দিল আফরোজের স্থগিত এমপিও ছাড়ের একটি জাল চিঠি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। মাদরাসা অধিদপ্তরের দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে চিঠিটি তৈরি করে কর্মচারীদের চক্রটি। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও জালিয়াতি করার চেষ্টায় ছিলে চক্রটি। এ নিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষা প্রশাসন। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ২ জন কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে জানান চিঠিটি জাল। ফলে ভণ্ডুল হয়ে যায় জালিয়াত চক্রটির উদ্দেশ্য।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, জালিয়াত চক্রটিকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ডিএমপি কমিশনার এবং সিআইডির এডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেলকে চিঠি দিয়েছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে জালিয়াতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জালিয়াত চক্রটি চিহ্নিত করতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এবং সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। গত ২২ মার্চ এসব চিঠি পাঠানো হয়।

এর আগে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুরার ঘাট মাদরাসার একজন শিক্ষক গত বছরের অক্টোবর মাসে দৈনিক শিক্ষাকে জানান, পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছে ৫ জন শিক্ষকের স্থগিত থাকা এমপিও ছাড়ের। সেই সূত্র ধরে দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতিবেদক অনুসরণ করতে থাকে এ চক্রটিকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুরারঘাট বহুমুখী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেনসহ পাঁচ জন শিক্ষকের বন্ধ থাকা এমপিও ছাড়করণের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর একটি চিঠি এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সে বছরের ২৬ ডিসেম্বর একটি চিঠি আসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। কিন্তু মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে এসব শিক্ষকের এমপিও ছাড় করার জন্য কোনো চিঠি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেন কর্মকর্তারা। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখলে জানা যায়, স্বাক্ষর জাল করে চিঠি দুটি পাঠানো হয়েছে। জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তিন ও মাদরাসা অধিদপ্তরের দুই কর্মচারী। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় শিক্ষা অধিদপ্তরের মাদরাসা শাখার একজন উচ্চমান সহকারী। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের একজন কর্মচারী এবং বেসরকারি কলেজ শাখার উপ-পরিচালকের সাবেক পিয়ন রাব্বি। আর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারী মোজাহিদ ও ফারুক। এই মোজাহিদ ও ফারুক মাদরাসা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও যুগ্ম-সচিব মো. বিল্লাল হোসেনের ভাতিজা ও ভাগ্নি জামাই। 

জানা যায়, ভোলার যুবদল নেতা রাব্বী এলাকা থেকে তাড়া খেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে এসেছিলেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও রাব্বী নিজেকে তার এলাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে বেসরকারি শাখা থেকে ফাইলের তথ্য অভিযুক্তদের কাছে ফটোকপি করে দেয়ার একটি ঘটনা ধরে পড়ে একজন কর্মকর্তার হাতে। শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও তথ্য পাচার এবং জালিয়াতিতে যুক্ত না থাকতে রাব্বীকে সতর্ক করা হয়। কয়েকমাস আগে রাব্বীকে ঢাকার  একটি স্কুলে বদলি করা হলেও তিনি আবার শিক্ষা অধিদপ্তরে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062930583953857