নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যাপারে বিধিগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজধানীতে আমরণ অনশনরত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ২২ জুন দেয়া স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো স্মারকলিপির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয় ‘বিধিগতভাবে’ সমাধানের জন্য। সেভাবেই শিক্ষকদের স্মারকলিপিটি পাঠানো হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এর মানে এই নয় য়ে এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
আমরণ অনশনরত ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয়ভূষণ রায় দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে সরকার গঠিত কমিটি আগামীকাল (বুধবার) ফের বৈঠকে বসবে।
রাজধানীর পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে আয়োজিত ওই সভায় এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে ‘বিধিগত’ শর্তসংবলিত একটি আবেদন ফরম উপস্থাপন করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই ফরমেই এমপিও চেয়ে আবেদন করতে হবে। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষকদের ডেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একজন অতিরিক্ত সচিব আলোচনা করেছেন।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৪ দিন ধরে আন্দোলনে আছেন শিক্ষকরা। এর মধ্যে ৯ দিন ধরেই আমরণ অনশন করছেন তারা। লাগাতার আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ২২ জুন শিক্ষকেরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন।
ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহুমুদুন্নবী ডলার বলেন, রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্তির ব্যাপারে গত ২৮ জুন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইনকে নির্দেশনা দেয়া হয়। মঙ্গলবার ওই চিঠির একটি কপি তারাও পেয়েছেন।
তিনি জানান, টানা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত মোট ১৯৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ১০২ জনকে বিভিন্ন সময়ে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হয়েছে। মঙ্গলবারও অনশনস্থলে ১১ জনকে স্যালাইন দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। মঙ্গলবারও নতুন করে দু’জনকে ভর্তি করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
প্রথমবারের মতো আলোচনা: নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার তার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টিম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের আলোচনায় যেতে আহ্বান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা যান।
তিনি বলেন, এমপিও কার্যক্রমের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদের সঙ্গে তাদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। জবাবে শিক্ষক নেতারা বলেছেন, আলোচনা আশ্বাসে অতীতে ২৬ বার আন্দোলন থেকে করে গিয়েও তারা কোনো লাভ পাননি। বরং শিক্ষকদের বাড়ি পাঠিয়ে বাকিরা নিশ্চিন্ত হন। তাই এবার আন্দোলন ও আলোচনা পাশাপাশি চলবে।
অনশনরত শিক্ষক সরদার শাহ আলম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হলো। অতিরিক্ত সচিব আলোচনায় না গিয়ে আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হয়েছে কিনা- জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, শিক্ষা ও অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা ধর্ণা দিয়েছি। সেটাই আলোচনার অংশ ছিল। কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরাবর তারা যে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন তার একটি কপি অতিরিক্ত সচিবের কাছে দিয়ে এসেছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবের সঙ্গে আলোচনা শেষে আমাদের পরবর্তী বার্তা জানাবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ বলেন, শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে সেটা নিতান্তই প্রাথমিক পর্যায়ের। এখনও বলার মতো কিছু হয়নি।