আরেকটা কষ্টের পহেলা বৈশাখ গত হলো। মনের কষ্টে দিনটা যাদের কেটেছে, তারা জাতি গঠনের সুনিপুণ কারিগর। কেবল মুখের ফাঁকা বুলিতে দুনিয়ার আর কোন দেশে শিক্ষকদের এরকম সম্মান দেখানো হয় কী-না জানা নেই। আমাদের দেশে সে চর্চাটা অনেক পুরনো । মুখে মুখে শিক্ষকদের আমরা মাথায় তুলে রাখি । অথচ কিছু দেবার বেলায় অবহেলা দেখাই।
শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা না দেবার কারণ কিংবা যুক্তি কোনটাই খুঁজে পাই না। কারো জানা থাকলে জানালে একটা শান্তনা কিংবা তৃপ্তি পাওয়া যেত । নাকি শিক্ষকদের যত না দিয়ে পারা যায় তত মঙ্গল ? শিক্ষক সমাজকে এভাবে হেয় করে রাখার মানসিকতা যাদের-এরা দেশ ও জাতির দুশমন।
পহেলা বৈশাখ তো আর প্রতি সপ্তাহে বা মাসে আসে না। সারা বছর ঘুরে একবারই আসে। গত তিনটে বছর ধরে বৈশাখে অন্য রকম একটা কষ্ট সহ্য করে করে বেঁচে আছেন বেসরকারি শিক্ষকগণ। শিক্ষকদের জন্য তৃতীয়বার যারা পহেলা বৈশাখের আনন্দ মাটি করে দিয়েছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।
আমাদের দেশে শিক্ষকদের ’আপন’ ও ‘পর’ দু'টো ভাগে ভাগ করে রাখা হয়েছে। সরকারি শিক্ষকরা আপন আর বেসরকারি শিক্ষকরা পর-এ মানসিকতা কবে দূর হবে? এ এক চরম অমানবিক কাজ। সরকারি শিক্ষক-বেসরকারি শিক্ষক বলে যে বিভক্তি ও বিভাজন সে আমাদের জাতির জন্য কলঙ্কজনক ও অমর্যাদাকর। একই সিলেবাস পড়িয়ে, একই দায়িত্ব পালন করে এক শ্রেণি বৈশাখী ভাতা পাবে আর আরেক শ্রেণি পাবে না- িএটা কী করে হয়? এ করে করে আমাদের শিক্ষার আজ বেহাল দশা। শিক্ষার মানে ধ্বস, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চরম উদাসীনতা ও অমনোযোগিতা, নোট-গাইড-কোচিং ব্যবসা, প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি আমাদের আজ কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে? এ সবের কারণ খতিয়ে দেখার সময় এখন। সরকারি শিক্ষকেরা সব পাবেন-বেসরকারি শিক্ষকরা কিছু পাবেন কিছু পাবেন না, তাতো হয় না।
বেসরকারি শিক্ষকগণ ও তো দশটা থেকে চারটে পর্যন্ত স্কুল-কলেজে পাঠদান করেন। সরকারি শিক্ষকগণের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজ সমান ভাবে সমাধা করেন। সরকারি শিক্ষকগণ রুটিন মাফিক কাজ করলেও বেসরকারি শিক্ষকগণ রুটিনের বাইরেও অতিরিক্ত অনেক কাজ করে থাকেন। তবে মুল্যায়নের বেলায় তারা এত পিছে কেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জাতির জনকের গর্বিত সন্তান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতার যথার্থ উত্তরসুরি। বাংলা নববর্ষে বৈশাখি ভাতার প্রচলন করে বাংলা সন ও বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে তিনি অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর তৃতীয় বারের মত বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য ও অনন্য এ অর্জনটিকে ম্লান করে রাখা হয়েছে। এ লজ্জা গোটা জাতির। এর আশু অবসান একান্ত অপরিহার্য ।
লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ।