এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করোনার ক্রান্তিকালে শিক্ষক-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন ভাতা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশ উপেক্ষা করে মাত্র ১৮ শতাংশ বেতন পরিশোধ করেছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে পাঠানো এক চিঠিতে এসব অভিযোগ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা।
চিঠিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, সারাবিশ্ব আজ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তায় আপনারা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রসংশনীয়। করোনার এ দুর্যোগকালে গত ৭ মে দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশ উপেক্ষা করে ৮২ শতাংশ বেতন কেটে মাত্র ১৮ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছে, যা মাত্র ১২ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে মাসিক ভরণপোষন তো দূরের কথা বাসা ভাড়াই দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও নিজেকে ভিসি দাবি করা আবুল হাসান সাদেক ২৫ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্লাস করাতে বাধ্য করেন। আবুল হাসান সাদেক বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি নন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করেন ও মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষকদের নিজস্ব ডিভাইসে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল দিয়ে অনলাইন ক্লাসও করান তিনি।
তারা চিঠিতে আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারের সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ না করলে মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয় না। কিন্তু বন্ধের আগে সব শিক্ষার্থীর থেকে বেতন উত্তোলন করে মিডটার্ম পরীক্ষা নিয়ে তার ফলাফলও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী এ মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদিকে মেধাবী, অস্বচ্ছল ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ওয়েভার দেয়া, নিজস্ব জনবল দিয়ে টাকা জমা নেয়ায় ডাটাবেসে সঠিক ডাটা এন্ট্রি না হওয়া, ড্রপ আউট বকেয়া ও নতুন সেমিস্টারে ভর্তি বকেয়া বাবদ প্রায় ১ কোটি টাকা অনাদায় দেখিয়ে আমাদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে সাদেক প্রশাসন। অথচ সেমিস্টারের সব চাহিদাই পূর্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের।
অভিযোগকারীরা চিঠিতে আরও জানান, ইউজিসিতে পাঠানো বেতন প্রদান সম্পর্কিত তথ্যের বিবরণীতে শিক্ষকদের বেতন প্রদানের যে তথ্য দেয়া হয়েছে বাস্তবে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম বেতন দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে সব শিক্ষক স্টাফকে বাদ দিয়ে শুধু পার্টটাইম শিক্ষকদের দিয়ে অনলাইনভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা ও শিক্ষার নামে ছাত্রদের কাছে সার্টিফিকেট বিক্রি করার পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। কারণ বর্তমানে ৫টি বিভাগে পূর্ণকালীন শিক্ষক মাত্র একজন এবং কোনো পিয়ন বা অফিসারও নেই। ইতোমধ্যে বহু পুরাতন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করেছেন তিনি। তারা সকলেই ১৮-১৯ বছর চাকরি করে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে চিঠিতে জানায় শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ অবস্থায় সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা বোনাস প্রদান ও সুষ্ঠু অডিট পরিচালনা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা ও অবৈধ উপায়ে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক কর্মচারীরা।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য আবুল হাসান সাদেক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'আমরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করার জন্য শিক্ষকদের অংশগ্রহণ করতে বললে অনেকেই তাতে সাড়া দেননি। যারা সাড়া দিয়েছেন তাদের সেই হিসেবে বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনকাম বন্ধ হয়ে গেছে। তাই কিছু কম বেশি দেয়া হয়েছে।'
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, 'আসলে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সময় যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে পাশে দাঁড়াননি তাদের এক কাতারে বিবেচনা করাটা অবশ্যই ঠিক হবে না। অনেকে প্রয়োজনের সময় আমাদের সহযোগিতা করেছেন তারা ঠিকভাবে বেতন ভাতা পেয়েছেন, যারা করেননি তাদের সেই হিসেবে বেতন ভাতা দেয়া হয়েছে। কিছু কম পেয়ে তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা যেসব অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়।'