বর্তমানে জ্ঞানবিজ্ঞান আর প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির অন্যতম সফল হাতিয়ার হলো কম্পিউটার। আজকে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিত্সা, ক্রীড়া, বিমানপথ, রেলপথ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কম্পিউটার। তাই চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে আমরা এই কথা বলতে আজ বাধ্য হচ্ছি যে, “যে জাতি যত কম্পিউটার শিক্ষায় শিক্ষিত, সে জাতি তত দক্ষ ও উন্নত।” কারণ আজকের অত্যাধুনিক বিশ্বকে কম্পিউটার ছাড়া কল্পনা করা যায় না।
বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সতেরো কোটি। এই অধিক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে কম্পিউটার শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দুরাশার বাণী হলো: আমাদের দেশের অধিকাংশ বি এ অনার্স, মাস্টার্স তথা উচ্চ শিক্ষিত লোকেরাও কম্পিউটার অফ আর অন করতে জানে না। অথচ, কম্পিউটারের বহুল প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। তাই পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে এসে কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণে হন্য হয়ে পড়েছে চাকরি প্রত্যাশী যুবকেরা। অনেকেরই কম্পিউটার শিক্ষা লাভ করতে করতে চাকরির বয়সই শেষ হয়ে যাচ্ছে। চাকরিতে যদি কম্পিউটার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি হতেই বাংলা, ইংরেজি, গণিতের ন্যায় কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি কেন?
জবাবে অনেকেই বলবে ইতোমধ্যেই সরকার ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত ও বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে পরীক্ষায় এ প্লাসও পাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে যখন চাকরির ভাইভাতে যাচ্ছে তখন প্রার্থীকে বলা হচ্ছে আপনার কি কম্পিউটারে এক বছরের বা ছয় মাসের অভিজ্ঞতা বা সার্টিফিকেট আছে কিনা। তাকে কিন্তু একবারও বলা হচ্ছে না যে আপনার আইসিটি তে কি এ প্লাস আছে? তার মানে এটাই প্রমাণ করে যে আমরা আইসিটির সিলেবাস পড়ে কম্পিউটার শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারছি না।
আজ কম্পিউটার শিক্ষা লাভ যেন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের অনগ্রসর জনবলের মধ্যে সরকারিভাবে কম্পিউটার শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে তা খুবই সামান্য। আজও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত বেকারের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। সুতরাং দেশের চার কোটি শিক্ষিত বেকারকে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে পারলে দেশের বোঝা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।
বর্তমান যুগ কম্পিউটারের যুগ। যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে কম্পিউটার শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই জাতীয় স্বার্থ ও উন্নতির কথা বিবেচনা করে ষষ্ঠ শ্রেণি হতে অনার্স পর্যন্ত কম্পিউটার কোর্স অন্তর্ভুক্ত ও বাধ্যতামূলক করা উচিত। একই সঙ্গে ইতোমধ্যে বি এ, বি এ অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন হওয়া শিক্ষার্থীদেরকে সরকারিভাবে কম্পিউটার কোর্স করার সুযোগ দেওয়াও জরুরি। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত ও গতিশীল রাখতে কম্পিউটার শিক্ষা ছাড়া উপায় নেই।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক