করোনা : আগামী এক মাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ - দৈনিকশিক্ষা

করোনা : আগামী এক মাস সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার এক প্রায় মাস পরেও অন্য দেশের তুলনায় প্রাদুর্ভাব কম হওয়ায় প্রাণঘাতী এ রোগকে আর ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন না অনেকেই। যাদের মতামত শুনে সরকারের নানামুখী কঠোর পদক্ষেপের পরেও রীতিমতো স্বস্তি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন বহুমানুষ। অনেক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের পরও অতিউৎসাহী মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। অথচ দেশে দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ার চিত্র বলে দিচ্ছে, পেছনে নয় বরং আগামী দিনগুলোই দেশের সামনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোতে মহামারি রূপ নিয়ে করোনা হাজির হয়েছে ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায়। এমনকি প্রথম এক মাসের হিসেবেও অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বস্তির নয়। রোববার (৫ এপ্রিল) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তাই প্রথম এক মাস দেখেই ‘করোনা’কে গুরুত্বহীন ভাবা বিপদের কারণ হতে পারে উল্লেখ করে বিশেজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সকল নির্দেশ মেনে আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাপন করা জরুরি। তবে উদ্বেগের সঙ্গে করোনার চরিত্রগত বৈশিষ্টের কারণে আশার আলোও দেখছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের আবহাওয়া, মানুষের জীবনধারাও প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ইতিবাচক ফল দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর জানায় আইইডিসিআর। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানোর পর একদিনেই নতুন করে নয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও দুইজনের। ফলে গত ২৭ দিনে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭০ জন। সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক দিনে নতুন রোগীর এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ এই পরিস্থিতি তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে করোনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা উদ্বেগজনক সতর্ক বার্তা দিয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আশার বাণীও দিয়েছেন অনেকে। দেশের বহু চিকিৎসক এমনকি ভারতের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজির (এআইজি) চেয়ারম্যান ও পদ্মভূষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক জিপি নাগেশ্বর রেড্ডি ইতোমধ্যেই বলেছেন, করোনা নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। এ ভাইরাসকে জয় করা সম্ভব। ভারতে দেয়া তিন সপ্তাহের দেশব্যাপী লকডাউন আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন তিনি। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জীবনরহস্যের উন্মোচন এবং এর ওপর তাপমাত্রার প্রভাবের দুটো বিষয়ে তুলে ধরে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি।
 
ইতোমধ্যেই দেশে দেশে এ ভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন প্রবণতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের এপিডোমোলজি বিভাগের প্রধান ড. প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত বলছেন, ভাইরাসটির প্রবণতা ভিন্ন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণার আগে খুব বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এটা নতুন ভাইরাস। পশ্চিমা বিশ্বেও কিন্তু খুব বেশি তথ্য নেই। কিছু হাইপোথিসিস আছে, যেমন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো ভ্যালিড ডাটা নেই। তাই হাইপোথিসিসগুলোকে গ্রহণ বা নাকচ কোনোটিই করতে পারছি না।

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ডাটা অন্যদের সঙ্গে মেলে না কেন তা নিয়ে আমিও চিন্তা করছি। আমাদের এখানে ভাইরাসটি ইতালি থেকে এসেছে। সেটি ইতালিতে হ্যাভক তৈরি করল আর আমাদের এখানে কিছুই করছে না এরকম একটা ব্যাপার। বিষয়টা আমিও বুঝতে পারছি না। তবে উহান থেকে যে ভাইরাসটির উৎপত্তি তা কিন্তু মিউটেশন হয়েছে। কিছু দেশে একই ধরনের সংক্রমণের প্যাটার্ন হয়েছে। আবার অন্য কোথাও একটু ভিন্ন। আমাদের ভাইরাসটি উহান থেকে আসেনি।

এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ২৭ দিনের মাথায় এ ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত সামনে আসলেও সামনের দিনগুলোকেই সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিত্রই বলে দিচ্ছে আগামী এক মাস হতে পারে আরও কঠিন সময়।

বিশেষজ্ঞরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে চলা জনসাধারণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, যারা ভাবছেন ইউরোপের মতো পরিস্থিতি এশিয়া বা আমাদের দেশে হয়নি বলে বাইরে কোনো প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন। অথবা অফিস, স্কুল কিছু দিনের মধ্যে খুলে যাবে ভাবছেন তারা আসলে বোকার স্বার্গে বাস করছেন।

বাংলাদেশে শনিবার পর্যন্ত আক্রান্ত সংখ্যা ৭০ জন। এখনও এক মাস হয়নি। যেখানে অনেক দেশে পরীক্ষার সংখ্যা আমাদের কয়েকগুণ বেশি হলেও এক মাসে এত বেশি আক্রান্ত ছিল না। প্রায় সব দেশেই ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে করোনা নিয়েছে মহামারি রূপ। তাপমাত্রার হিসেবও মিলছে না এক্ষেত্রে।

যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১ জানুয়ারি প্রথম ১ জন শনাক্ত হয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারি হয় ৭ জন। ১ মার্চ হয় ৭৪ জন। আর ১ এপ্রিল রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৯০ হাজারে। ইতালিতে ৩১ জানুয়ারি ২ জন শনাক্ত হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি এক হাজার ১০০ জন, ৩১ মার্চ হয় এক লাখ পাঁচ হাজার জন। স্পেনে ১ ফেব্রুয়ারি ছিল এক জন, ১ মার্চ হয় ৮৪ জন, ৩১ মার্চ হয় ৯৬ হাজার।
 
যুক্তরাজ্যে ৩১ জানুয়ারি ছিল দু’জন, ১ মার্চ হয় ৩৬ জন, ৩১ মার্চ হয় ২৫ হাজার ৫০০ জন। জার্মানিতে ২৭ জানুয়ারি ছিল এক জন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ৪৬ জন, ২৭ মার্চ হয় ৫১ হাজার, ৩১ মার্চ হয় ৭১ হাজার ৮০০ জন। ফ্রান্সে ২৪ জানুয়ারি ছিল দুজন, ২৪ ফেব্রুয়ারি ১২ জন, ২৪ মার্চ হয় ২২ হাজার ৬০০ জন, ৩১ মার্চ ৫২ হাজার ৮০০ জন। ভারতে ৩০ জানুয়ারি ছিল ১ জন, ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩ জন, ৩১ মার্চ হয় এক হাজার ৪০০ জন। পাকিস্তানে ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল দুজন, ২৬ মার্চ ছিল এক হাজার ২০০ জন, ৩১ মার্চ হয় এক হাজার ৯০০ জন।

এদিকে ব্রাজিলে তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৯০৪ জন। প্রথম শনাক্তের ৩৩তম মিনের মাথায় মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জন। ইন্দোনেশিয়ায় তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩১ ডিগ্রি, শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ২৮৫ জন, ২৭ দিনের মাথায় মৃত্যু ১১৪ জন। ফিলিপিন্সে তাপমাত্রা ২৯ থেকে ৩৫ ডিগ্রি, শনাক্ত এক হাজার ৪১৮ জন। ২৪ দিনের মাথায় মৃত্যু ৭১ জন। মালয়েশিয়ায় তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩৪ ডিগ্রি, শনাক্ত দুই হাজার ৪৭০ জন। মৃত্যু ৬৪ দিনের মাথায় ৩৪ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিসংখ্যান অনুসারেই ইতালিতে মহামারি রূপ নিয়ে শনাক্ত হবার ৪৫তম দিনের মাথায়। স্পেনে শনাক্ত হওয়ার ৫০তম দিনের মাথায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম শনাক্ত হওয়ার ৫৫তম দিনের মাথায় মহামারি রূপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036840438842773