করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্ত সাংবাদিক স্বামীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে অবশেষে রোগটির উপসর্গ নিয়ে এক নারী নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। গত রোববার সকালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই শিক্ষকের মৃত্যু হয়।
মৃতের নাম রাশিদা আক্তার রুনু (৫১)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি মাহাবুব আলম লিটনের স্ত্রী ও ফতেহপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। রোববার বিকেলে উপজেলার রতনপুর গ্রামে বাবার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
আত্মীয়-স্বজনরা জানান, সাংবাদিক লিটন গত ১৮ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর নিষেধ উপেক্ষা করে স্ত্রী রাশিদা আক্তার একই কক্ষে থেকে নিজেকে স্বামীর সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত করেন। গত শুক্রবার স্বামীর করোনা নেগেটিভ এলে ঈদকে সামনে রেখে রাশিদার ঘরে খুশির বারতা বইতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যে কখন যে তাঁর শরীরে রোগ বাসা বাঁধে, তিনি বুঝতে পারেননি। পরদিন শনিবার বিকেলে করোনা উপসর্গ (শ্বাসকষ্ট) নিয়ে ডায়াবেটিস রোগী রাশিদা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে সন্ধ্যায় দ্রুত তাঁকে কুমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানেই পরদিন সকালে মারা যান তিনি।
মৃতের ছোট বোন রহিমা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “দুলাভাই (সাংবাদিক) করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আপাকে বলেছিলেন, ‘তুমি ডায়াবেটিস রোগী। কয়েকটা দিন আমার কাছ থেকে আলাদা কক্ষে থাকো।’ কিন্তু তখন আপা বলেছিলেন, ‘তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার দূরে থেকে কী লাভ? এমন কিছু হওয়ার আগে খোদা যেন দুনিয়া থেকে আমাকেই নিয়ে নেন।’ আল্লাহ যেন আপার সেই ইচ্ছাটুকুই কবুল করলেন।”
মৃত্যুর আগে করোনা পরীক্ষার জন্য রাশিদা আক্তারের নমুনা সংগ্রহ করেছে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।