করোনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী সংগ্রহে বাড়ি বাড়ি কলেজ শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

করোনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী সংগ্রহে বাড়ি বাড়ি কলেজ শিক্ষকরা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি |

চলতি বছর একাদশ শ্রেণিতে এখনও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়নি। অথচ করোনার মধ্যেও চলছে যশোরের চৌগাছার কলেজগুলোর ছাত্র সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। নিজের কলেজে ভর্তি করানোর জন্য ছয় সাতজন শিক্ষক দল বেঁধে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে অভিভাবকরা চরম আতঙ্কিত। দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র বস্তুনিষ্ঠ পত্রিকা দৈনিক শিক্ষা ডটকমের মাধ্যমে শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি ঘোরা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, এ বছর উপজেলার ৬৭টি স্কুল কলেজ আর মাদরাসার মোট ৩ হাজার
৫৪৪ জন ছাত্রছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৬ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। আর ১৫৮জন ছাত্র ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

চৌগাছা উপজেলায় মোট ১১ টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১টি সরকারি, ৪ টি ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ের কলেজ আর বাকি ৬টি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ। এসব কলেজে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখা মিলে দুই হাজারেরও বেশি আসন রয়েছে।

ভর্তির জন্য এসব কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত দল বেঁধে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাদের এ ভাবে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি যাওয়ায় করোনা নিয়ে অভিভাবকরা চরমভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। করোনার কারনে যারা অন্যের বাড়িতে যাচ্ছেনা তাদের বাড়িতে এভাবে দলে দলে লোকজন আসায় তারা পড়েছেন চরম বিপাদে। আবার কলেজের শিক্ষক হওয়ায় তারা এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারছেনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার সরকারি কলেজের শিক্ষকরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে এ প্লাস ও এ গ্রেড পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তারা বই, উপবৃত্তি, কলেজের ফান্ড থেকে বৃত্তি, প্রাইভেট ফ্রি ও হোস্টেলে থাকাসহ নানা রকম প্রলোভোন দেখাচ্ছেন। একই ভাবে প্রলোভোন দেখাচ্ছেন অন্যান্য কলেজগুলো। যেসব প্রতিস্রুতির অধিকাংশই পরে আর পুরণ করা হয়না বলে এসব কলেজের সাবেক ছাত্ররা অভিযোগ করেন। 

সম্প্রতি চৌগাছা  উপজেলায় নতুন চারটি কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব কলেজের শিক্ষকরা বলেন, সরকারী কলেজসহ প্রতিষ্ঠিত বড় বড় কলেজের শিক্ষকরা ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের চাপে আমাদের কলেজ বাঁচনোর তাগিদে ছাত্র ভর্তিতে বাড়ি বাড়ি যেতে হচ্ছে। 

এসব কলেজে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসএসসির প্রবেশ পত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে আসছেন। আবেদনের সময় তারা নিজেরাই নিজেদের কলেজ থেকে ভর্তি আবেদন করে দেন। ছাত্র ছাত্রীরা আবেদন পত্র পূরণ করলে দশটি পর্যন্ত কলেজের নাম দিতে পারে কিন্তু তারা নিজেরা পূরণ করার সময় শুধু তাদের কলেজের নামই দিচ্ছেন । সে
ক্ষেত্রে এ শিক্ষার্থীর আর বিকল্প কোন কলেজ হাতে থাকেনা বলে জানা গেছে।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বছর গ্রামের স্কুল থেকে এ গ্রেড পেয়ে আমার ছেলে পাস করেছে। শুনেছি এখনও ভর্তির সময় হয়নি। কিন্তু আমার বাড়িতে কয়েকটি কলেজের চার পাঁচ জন করে শিক্ষক কয়েকবার এসেছেন। আমি তাদের কিছু বলতেও পারছি না।

উজিরপুর গ্রামের সাকিবুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছি। আমি যশোরে ভর্তি হতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা এসে আমাকে আর আমার বাবাকে বার বার নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টা আমার জন্য চরম বিরক্তিকর।

পাতিবিলা গ্রামের আশাদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এ বছর মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেছি। আমি মাদরাসায় আলিম পড়তে চাই কিন্তু বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা আমার বাড়িতে এসে আমাদের বার বার বলছেন, মাদরাসা পড়লে কোন চাকরি
হবেনা। এ সময় মাদরাসা পড়ে কোন লাভ হবেনা তুমি বরং আমাদের কলেজে পড়ো।

জিসিবি অদর্শ কলেজে অধ্যক্ষ আবু জাফর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলো যদি ছাত্র ভর্তির জন্য বাড়ি বাড়ি না যেতো তাহলে আমরা করোনার এ সময়ে বেরই হতাম না। কোন কোন যায়গায় বাধ্য হয়ে কলেজের জন্য আমরা নিজেদের টাকায় শিক্ষার্থীদের বই খাতা পর্যন্ত কিনে দিচ্ছি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম রফিকুজ্জামান এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, এ পরিস্থিতিতে তারা বিষয়টি মোটেও ঠিক
করছেননা। সরকার যেখানে সামাজিক দুরত্ববজায় রাখার উপর জোর দিচ্ছেন। সেখানে দলে দলে এভাবে কারো বাড়িতে যাওয়াতো কোন ভাবেই ঠিক হচ্ছেনা। আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003777027130127