করোনা পরীক্ষর ফল ‘ফলস নেগেটিভ’ আসলে কী করবেন? - দৈনিকশিক্ষা

করোনা পরীক্ষর ফল ‘ফলস নেগেটিভ’ আসলে কী করবেন?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে করা নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে অনেকের 'ফলস নেগেটিভ' এসেছে - অর্থাৎ নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও তা শনাক্ত না হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার লক্ষ্যে অন্তত ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের শতভাগই যে সঠিক, সেরকম নয়।

যার ফলে কোভিড-১৯-এর সব ধরণের লক্ষণ থাকার পরও নমুনা পরীক্ষায় শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে অনেকের নমুনার ফলাফল জানাচ্ছে।

আর এরকম পরিস্থিতিতে কী করবেন, তা নিয়ে দোটানায় পড়তে হয়েছে অনেককেই।

'এমন দোটানায় আগে কখনো পড়িনি'

এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা শোভন কামালের স্ত্রী'র কোভিড-১৯-এর উপসর্গ দেখা যায়। প্রথম দু'দিন সর্দিজ্বর, কাশি, মাথাব্যথার মত উপসর্গ থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে দেখা যায় শ্বাসকষ্ট।

তার পরদিনই তার স্ত্রী'র নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়। তবে চারদিন পর ঐ নমুনা পরীক্ষার ফল আসে নেগেটিভ।

ঐ চারদিনের মধ্যে মি. কামালের স্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি না হলেও বিশেষ উন্নতিও হয়নি। শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দেয়ার পর থেকেই মি. কামাল ও তার স্ত্রী বাসার একটি ঘরে একসাথে আইসোলেশনে চলে যান।

কিন্তু নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর বেশ দোটানায় পড়ে যান মি. কামালের পুরো পরিবার।

"স্ত্রী'র উপসর্গ থাকায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে সে কোভিড-১৯ আক্রান্ত। বাসায় যেহেতু বয়স্ক বাবা-মা আছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্ত্রীর সাথে একটি ঘরে আলাদা হয়ে থাকতে শুরু করি। অফিসেও জানিয়ে দেই", বলেন মি. কামাল।

কিন্তু পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর তার অফিস থেকে চাপ আসতে থাকে কাজে যোগ দেয়ার জন্য।

"অফিসে যখন জানাই যে আমার স্ত্রী'র নেগেটিভ এসেছে, তখন তারা আমাকে বলে কাজে যোগ দিতে। কিন্তু তখনও আমার স্ত্রী'র মধ্যে উপসর্গ ছিল।"

এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের এবং অফিসের সহকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে দুই সপ্তাহের ছুটির আবেদন করেন মি. কামাল, তবে তিনি বলেন তার অফিস বিষয়টিকে ভালভাবে দেখেনি।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তামান্না নিতুও একই ধরণের সমস্যায় পড়েছিলেন। তার স্বামীর মধ্যে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ দেখা গেলেও প্রথম দুইবার পরীক্ষায় ফল আসে নেগেটিভ।

মিজ. নিতু বলেন, "নেগেটিভ আসায় পুরো পরিবার এমন একটা দোটানায় পড়ে যায়, যেরকমটা আগে কখনো চিন্তাই করিনি। অফিসে যাবো কিনা, বাসায় কাজের লোক আসতে দেবো কিনা, পরিবারের বয়স্কদের আলাদা রাখবো কিনা - সব কিছু নিয়ে একসাথে সংশয় তৈরি হয়।"

পরীক্ষায় কেন আসে 'ফলস নেগেটিভ?'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশে যেই আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়, সেই পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলে অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ''ফলস নেগেটিভ'' ফল আসতে পারে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের রেসপিরটরি মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট রওশন আরা খানম বলেন, "আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে একদম সর্বোচ্চ মানের ল্যাবরেটরিতেও যদি পরীক্ষা করা হয়, তারপরেও ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত ভুল ফল আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। অর্থাৎ দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকলেও ফলাফল নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা থাকে।"

ড. রওশন আরা খানম বলেন মূলত দেহের কোন্ অংশ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ফলস নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা কতটা।

"বাংলাদেশে সাধারণত নাক থেকে এবং গলার ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়, এই অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফল আসার সম্ভাবনা থাকে," বলছেন ড. খানম।

তবে অপেক্ষাকৃত খরচসাপেক্ষ সিটিস্ক্যান বা তুলনামূলক জটিল ব্রঙ্কোস্কপির মাধ্যমে, কিংবা চেস্ট এক্স-রে পদ্ধতিতে আরো নিখুঁতভাবে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন ড. খানম।

এছাড়া যিনি নমুনা সংগ্রহ করবেন তার দক্ষতা, পরীক্ষাগারে নেয়ার আগ পর্যন্ত নমুনা যথাযথভাবে সংরক্ষণের মত বিষয়গুলোর ওপরও পরীক্ষার ফলাফল কিছুটা নির্ভর করতে পারে।

'ফলস নেগেটিভ' আসলে কী করবেন?

বর্তমান পরিস্থিতিতে কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ।

"এখন আর পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করে থাকলে চলবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এরকম একটি গাইডলাইন রয়েছে যে কারো মধ্যে উপসর্গ দেখা গেলেই তাকে কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে দেখতে হবে।"

বে-নজীর আহমেদ জানান উপসর্গ দেখা গেলেই ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক বা পারিবারিকভাবে আইসোলেশনে নিতে হবে, তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিনের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে।

আর উপসর্গ আছে এমন রোগী কার কার সংস্পর্শে এসেছিল, তা নির্ণয় করতে উপসর্গ দেখা দেয়ার অন্তত তিন দিন আগে পর্যন্ত রোগীর কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ড. রওশন আরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উপসর্গ দেখা দেয়া বন্ধ হওয়ার পর অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে, তাই এই সময়কাল রোগীর কোয়ারেন্টিনে থাকা প্রয়োজন।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074248313903809