করোনার থাবায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাত শীর্ষে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৭ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে ৬ আগষ্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ছুটি আরও বাড়তে পারে। এই দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংসদ টিভি অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছে এবং গত ১৮ জুন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিজ নিজ উদ্যোগে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাস চালু করেছে এবং শিক্ষকরাও যার যার সামর্থ অনুসারে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু এই অনলাইন ক্লাসের সুবিধা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই গ্রহণ করতে পারছে না। শহরের তুলনায় মফস্বলের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বঞ্চিত হচ্ছে। ইন্টারনেটের ধীরগতি, উচ্চ মূল্য এবং প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারছে না।
আমার মনে হয়, প্রযুক্তির ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। কারণ মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত পরিবার থেকে আসে। তাদের অনেকের অনলাইন ক্লাস করার উপযোগী ডিভাইস ও ইন্টারনেটের ডাটা প্যাক কেনার সামর্থ্য নেই। কিন্তু প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত হবার আগ্রহ আছে সবার। সকলের এই ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শতভাগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার সময় এসেছে। একমাত্র প্রযুক্তির ব্যবহারই পারে শহর ও মফস্বলের ব্যবধান কমিয়ে আনতে। বাংলাদেশকে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করতে।
এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে সময়োপযোগী কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদেরকে প্রযুক্তির ব্যবহারে আকৃষ্ট করার জন্য শিক্ষা ঋণ দেয়া যেতে পারে এবং বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া যেতে পারে। শিক্ষাঋণ দেয়া হলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় ডিভাইস (মোবাইল বা ল্যাপটপ) কিনে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে, নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। আশাকরি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
করোনা আমাদের অনেক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে, আমাদেরকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকটা বাধ্য করছে। করোনা অন্ধকার কেটে যাবে, প্রযুক্তির আলোয় আলোকিত হবে দেশ। করোনা মুক্ত একটি নতুন সকালের অপেক্ষার বিশ্ববাসী।
লেখক : জহির উদ্দিন হাওলাদার, মহাসচিব, বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন।