করোনাভাইরাস এবং আমাদের লোভাতুর মানসিকতা - দৈনিকশিক্ষা

করোনাভাইরাস এবং আমাদের লোভাতুর মানসিকতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন সচেতনতা। যেহেতু বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তাই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললেই নিরাপদে থাকা সম্ভব। সহজভাবে বললে এভাবেই বলা যায়।

কারণ এখন পর্যন্ত এমন একজন রোগী কি আমাদের দেশে পাওয়া গেছে, যিনি এই বাংলাদেশে থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন? যায়নি। যাঁদের ভেতর এই ভাইরাস পাওয়া গেছে তাঁরা তিনজন ইতালিফেরত। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী। বিমানবন্দর দিয়ে যখন ঢুকেছেন, তখন তাঁদের ভেতর ওই ভাইরাসের লক্ষণ ছিল না। পরবর্তী সময়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ সুপ্ত অবস্থায় থাকা ভাইরাসটি বিদেশ থেকেই তাঁরা বহন করে এনেছিলেন। তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরাই এসেছেন তাঁরাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ)  কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, তার মানে দাঁড়াল এই যে দেশে করোনার কোনো স্থায়ী রূপ নেই, যা প্রত্যক্ষ হচ্ছে তা হলো—বিদেশ থেকে মানুষের শরীরে বাহিত হয়ে দেশে ঢুকেছে।

এখন যেহেতু একবার ঢুকে পড়েছে, তখন আক্রান্তদের সংস্পর্শে না এলেই এর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য সরকারের তরফ থেকে নানা রকম প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

প্রতি মুহূর্তে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের—সংক্ষেপে আইইডিসিআর থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হচ্ছে সর্বশেষ তথ্য। যা জনগণের জন্য খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে এ নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি জনমনে কেউ যেন না ছড়ায়।

করোনার কারণে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাঁদের এ পরিস্থিতিতে সফর বাতিল করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশের বাইরে না যাওয়ার ব্যাপারেও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। বিদেশি অনেক এয়ারলাইনসও মানুষের কথা ভেবে তাদের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে।

সব কিছু বিবেচনায় রেখে করোনাভাইরাস নিয়ে জনমনে সচেতনতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই সচেতনতাকে পুঁজি করে অনেকেই নানা রকম ব্যবসা পেতে বসেছে। মানুষকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনার ধুম পড়েছে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে। অবশ্যই শুধু এই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলেই এগুলো ব্যবহার করতে হবে, অন্য সময় প্রয়োজন নেই—বিষয়টি এমনও নয়। যেহেতু করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, তাই বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন হিসেবে ওইগুলোর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ সব ধরনের সংকটকে পুঁজি করে নিজেরা ফায়দা খোঁজে। তাদের কথা মনে হলেই একাত্তরের সেই পাকিস্তানি সেনাদের এ দেশীয় দোসরদের কথা মনে পড়ে যায়। যারা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এ দেশের মানুষের ধন-সম্পদের দিকে নজর দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের সঙ্গে থেকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল বহু ঘরবাড়ি। আর এখন এই করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে যে সংকট বা টেনশন তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে এই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়ে টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এরা কি এই দেশকে ভালোবাসে? এরা কি এই দেশের মানুষকে ভালোবাসে? যদি এদের ভেতর ন্যূনতম মানবিক বোধটুকু থাকত, তাহলে তিন টাকার মাস্ক ৫০ টাকায় আর ৩০ টাকার মাস্ক ১৫০ টাকায় বিক্রি করত না। এদের সঙ্গে কি রাজাকার বা আলবদরদের খুব বেশি পার্থক্য আছে?

এদের ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের পত্রিকা বা অনলাইন খুলে দেখা যাবে—দেশের বহু জায়গায় মাস্কের গুদামে অভিযান চালানো হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মূল্য বেশি রাখায় রাজধানীর অনেক নামিদামি ফার্মেসিকে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এর থেকে কী বোঝা যায়? যখন দেশে কোনো সংকট যাতে না আসে সে জন্য সরকারের তরফ থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয় তখন একটি শ্রেণি সেই একাত্তরের রাজাকার ও আলবদরদের মতো নিজেদের আখের গোছানোর জন্য অল্প টাকার মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বৃদ্ধি করে জনগণকে জিম্মি করে ফেলে। এরা আসলে মানবিকতা হারিয়ে ফেলে। দানব হয়ে ওঠে।

কসাইয়ের সঙ্গে এদের তুলনা করলেও কসাইদের অসম্মানই করা হয়। এরা আসলে এই সমাজের কীট। সরকারের তরফ থেকে এদের কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন, যেমনটা মানবতাবিরোধীদের ব্যাপারে এ সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল। কারণ এখন যারা মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বাড়িয়ে জনগণকে জিম্মি করে শত শত কোটি টাকা এরই মধ্যে কামিয়ে নিয়েছে, তারা কি দেশপ্রেমিক? তারা আসলে দেশদ্রোহী। তারা সব সময় ওত পেতে থাকে কখন দেশে একটা দুর্যোগ বা সংকটময় পরিস্থিতি আসবে আর সেই সুযোগে নিজেরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নেবে।

করোনার এই সংকটময় মুহূর্তে আরেকটি শ্রেণি সুযোগ খুঁজছে—কিভাবে দেশের ভেতর অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা যায়। সরকারের নানা সমালোচনা করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে মানুষকে ঘরে বন্দি রেখে সরকার কিছু করতে পারছে না—এ রকম একটা পরিবেশ তৈরির সৃষ্টি করছে। বেশ কিছু গণমাধ্যম এই সংকটকে পুঁজি করে কারো কারো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের সুযোগ করে দিচ্ছে।

খবর প্রকাশে সংবেদনশীল হওয়া আর জনগণকে সচেতন করা এখন এক হয়ে গেছে। কোনটা প্রকৃতপক্ষে একজন সংবাদকর্মীর নীতিনৈতিকতার মধ্যে পড়ে আর কোনটা দেশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, পরোক্ষভাবে সেটা বোঝার জায়গায় বেশ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে যেকোনো সংকটকালে সে দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসে, সেখানে আমাদের কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে কি আমরা এগিয়ে আসতে দেখেছি? কিংবা কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান জনসেবায় কার্যকর কোনো ভূমিকায় এগিয়ে এসেছে?

দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক আছেন, যাঁদের একটু এগিয়ে আসায় অনেক সংকট দূর হতে পারে; কিন্তু তাঁদের কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না এই মুহূর্তে। অথচ জানা যায়, দেশে যখন নির্বাচন শুরু হয়, অমুক পার্টির জন্য, তমুক পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা চাঁদা দিতে অনেকেই কার্পণ্য করে না। টাকাটা বিফলে যাবে না। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো সমস্যা হবে না—এমনটা ভেবেই টাকা দিতে কোনো কষ্ট হয় না। আর এ করোনাভাইরাসের সংকটকালে সাধারণ মানুষের জন্য, সচেতন থাকার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা বিনা মূল্যে বিতরণ করার মানসিকতা তৈরি হতে অনেক কষ্ট হয় তাদের। কারণ এগুলো করলে কোনো রিটার্ন আসবে না।

করোনাভাইরাস একটি বিশেষ মুহূর্তের সংকট। এটার চিরস্থায়ী কোনো রূপ নেই। তবে যে মানুষগুলো এই মুহূর্তে মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বৃদ্ধি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে বা নিচ্ছে, তাদের চিনে রাখা প্রয়োজন সরকারের এবং সাধারণ মানুষের। এরা সমাজে ধিক্কৃত হোক, যেমন একাত্তরের মানবতাবিরোধীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় আজীবন ধিক্কৃত।

লেখক : সারওয়ার-উল-ইসলাম, সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050699710845947