করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সকল বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলো। সেবা নিতে এসে কেউ যেন বঞ্চিত না হন সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে গর্ভবতী সেবাসহ সকল বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম। করোনা আতঙ্কে রোগীরা নানা জায়গায় হয়রানি হলেও সুচিকিৎসা মিলছে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত দেশে ৮টি হাসপাতাল রয়েছে। সেগুলো হলো ঢাকার মগবাজারে আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জুরাইন, পোস্তগোলায় আদ্-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতাল, কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যশোরে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আদ্-দ্বীন শিশু হাসপাতাল ও আদ্-দ্বীন চক্ষু হাসপাতাল, খুলনায় আদ্-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুষ্টিয়ায় আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। এসব হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চালু রয়েছে গর্ভবতী সেবা, শিশু বিভাগ, টীকাদান কেন্দ্র, মেডিসিন বিভাগ, দন্ত বিভাগ, অর্থপেডিক্স, সার্জারি, প্যাথলজি, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, আইসিইউ, এনআইসিইউসহ সকল বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম।
করোনা মহামারির ক্রান্তিকালেও আদ্-দ্বীন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার রোগী সেবা নিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে দেড় শতাধিক রোগী। শুধু মগবাজার শাখা থেকে সেবা নিচ্ছে দিনে আটশতাধিক রোগী ।
গর্ভবতী সেবায় মায়েদের ভরসাস্থল এ হাসপাতালসমূহে প্রতিদিন গড়ে ৯৫টি সিজার ও ৫০টি নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু মগবাজারে প্রতিদিন ৪০টি সিজার ও ২৫টি নরমাল ডেলিভারি হয়ে থাকে।
গর্ভবতী সেবায় সেরা এ হাসপাতালে প্রতিদিন নিয়মিত চেকআপের জন্য আসছে পাঁচশতাধিক গর্ভবতী নারী। এরমধ্যে মগবাজার থেকেই দুই শতাধিক গর্ভবতী নারী সেবা নিচ্ছেন।
চালু রয়েছে গর্ভবতীদের জন্য টেলিমেডিসিন সেবা। লকডাউনের ফলে যারা হাসপাতালে আসতে পারছে না তারা এ সেবা নিচ্ছে। গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভকালীন খাবারসহ নানা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও নিয়মিত চেকআপকারীদের খোঁজখবর রাখছে কর্তব্যরত নার্সরা।
আদ্-দ্বীন হাসপাতালে বিশেষ খ্যাতি সর্বনিম্ন ব্যয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবায়। হাসপাতালসমূহে ১২০টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এসব অ্যাম্বুলেন্স নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এছাড়াও রোগী উঠানোর আগে ও পরে জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করা হয় । লকডাউনের সময়ে যানবাহনের অপ্রতুলতার কারণে গর্ভবতী নারীরা গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে যশোর ও খুলনায় রাতে গর্ভবতী মায়েদের সেবায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে হাত জীবনুমুক্ত করতে হাসপাতালের সামনে রয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। সেখান থেকে রোগী ও রোগীর সাথে থাকা আত্মীয়-স্বজন হাত ধুয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। প্রবেশপথে নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সেখান থেকেও হাত জীবানুমুক্ত করে হাসপাতালে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এছাড়াও প্রবেশপথে মাইকিং করে সকলকে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক উপেক্ষা করে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাহসিকতার সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছে আদ্-দ্বীন হাসাপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও সেবাকর্মীরা। তাদের নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ। স্বাস্থ্যখাতের যোদ্ধা হিসেবে তারা এ দুর্যোগকালীন রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও সেবা কর্মীরা।
জরিনা বেগম নামে এক রোগী বলেন, ‘আমার এলাকার সব হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। ডেলিভারি সময় হয়েছে কিন্তু ক্লিনিক বন্ধ । কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমার পরিচিত একজন জানালেন আদ্-দ্বীন হাসপাতাল খোলা থাকে। এখানে যান। কিন্তু ভয়ে ছিলাম করোনার জন্য নেয় কিনা। কিন্তু এসে সেবা পেলাম। এতে মনটা ভরে গেল। দোয়া করি আল্লাহ যেন এদের বাঁচিয়ে রাখে।’
জাহানারা নামে আরেক রোগী বলেন, ‘আমরা খুব পেরেশানিতে ছিলাম হাসপাতাল খোলা থাকে কি না। অনেকে বলছে যাইয়েন না। তারপরও এসে দেখলাম হাসপাতাল খোলা। সেবা পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ সকলকে রহম করুক।’
সোহেল রানা সবুজ বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসব নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। আল্লাহর রহমতে সন্তান ও স্ত্রী সুস্থ আছে। করোনা আতঙ্কের মাঝেও যেভাবে আমাদের সেবা দিয়েছে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’
আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মহা পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবায় আদ্-দ্বীন হাসপাতাল শুরু থেকে স্বল্পব্যয়ে মানসম্মত সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে নানা দুর্যোগে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে মেডিকেল টিম পাঠিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলাম। বর্তমান করোনা মহামারিতেও আমরা ২৪ ঘণ্টা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। কেউ যেন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য সব সময় সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যে কেউ প্রয়োজনে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে পারেন।’