করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এত দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক কারণেই উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী থেকে অভিভাবক, শিক্ষকমণ্ডলী ও দেশের কর্তাব্যক্তিরা। বুধবার (১৩ মে) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, বর্তমান সরকারের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষানীতি ও উপাচার্য-শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতার ফলে দেশের সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেশনজট নামের অভিশপ্ত শব্দটি দূর হয়েছে। সেইসঙ্গে বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় ক্যাম্পাসগুলোতে আগের যে কোনো সময়ের থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান। এর ফলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে না আসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অদূর ভবিষ্যতে না খোলার আশঙ্কায় সেশনজট নামক বিষাক্ত শব্দটি ফের যেন চোখ রাঙানি দিচ্ছে।
এ থেকে উত্তরণের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাপস বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, ইউটিউব) ব্যবহার করে পাঠদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। একই পদ্ধতিতে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। বিভিন্ন ক্রান্তিকালে উন্নত দেশগুলো এমন পদ্ধতি অবলম্বন করে তাদের দেশের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পেরেছে।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমন পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এমন পদ্ধতিতে পাঠদান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিরূপ মন্তব্যও করছেন। এমনিতেই বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে স্বাভাবিক অর্থনীতির চাকা স্থবির। আবার বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট ডেটা প্যাকের মূল্য অতীব চড়া। এখানেই শেষ নয়। ২০১২ সালে থ্রি জি এবং ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ফোর জি ইন্টারনেটের যুগে বাংলাদেশ প্রবেশ করলেও বিভাগীয় বা জেলাশহর ব্যতীত অন্যান্য স্থানে ইন্টারনেটের গতি যেন গরুর গাড়ির থেকেও মন্থর। আর গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেটের গতির অবস্থা বর্ণনা না করাই উত্তম।
গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্ত পরিবারের সদস্য। বর্তমানে এ ক্রান্তিকালে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে পুরো দেশ। ফলে ডেটা কিনে ইন্টারনেটে ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস করতে বাধ্য করা শিক্ষার্থীদের প্রতি এক ধরনের জুলুম হবে। আবার গ্রামীণ এলাকায় দুর্বল নেটওয়ার্কের ফলে অবিচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপন করে পাঠদান কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ সম্ভব নয় বলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পাঠ্যক্রম পরিপূর্ণরূপে অধ্যয়ন করতেও সক্ষম হবে না। এতে অর্ধ বা অপূর্ণ ধারণা নিয়ে শেষ হবে একেকটি লেকচার।
তবে এমন ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বপ্রথম প্রয়োজন ইন্টারনেট ডেটা নিশ্চিতকরণ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে ইন্টারনেট ডেটা প্রণোদনা হিসেবে দেয়া যেতে পারে অথবা ফ্রি বেসিক পদ্ধতির মতো পাঠদান ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা কোনো ইন্টারনেট ডেটা চার্জ ছাড়াই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় ই-তথ্য সেবা কেন্দ্রে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিতের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। যেহেতু সেসব স্থানে দেশের শিক্ষিত শ্রেণির পদচারণা ঘটবে, তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া হুট করে এমন অযাচিত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিলে একটা করতে গিয়ে ফল হবে আরেকটা। এমনটি ঘটলে অপর্যাপ্ত অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করা আর অসম্পূর্ণ জ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষার একটি স্তর পার করার মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকবে না।
লেখক : মো. আখতার হোসেন আজাদ, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া