তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গরু-ছাগল ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের হাট বসে। এ হাট বছরের পর বছর চলে আসছে। কলেজ মাঠে সাপ্তাহিক হাট বসায় কোনো বৃহস্পতিবারেই শিক্ষকরা কলেজে আসেন না। এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরাও আসে না। শুধু অফিস কক্ষটাই খোলা থাকে। নওগাঁ হাটটি সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাটটির অবস্থান সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার সীমানাবর্তী হওয়ায় সঙ্গত কারণেই ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিও একটু বেশি। গত ১৮ এপ্রিল ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নওগাঁ হাট ইজারা কমিটির সম্পাদিত এক চুক্তিনামা থেকে জানা যায়, এক কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্বে এক বছরের জন্য হাটটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার হাট সীমানার বাইরে কোনো প্রকার হাট লাগানো বা টোল আদায় করা যাবে না। এ ছাড়াও ইজারাদার নিজ খরচে হাট পরিষ্কার রাখবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ইজারাদাররা রীতিমতো হাটের সীমানার বাইরে কলেজ মাঠে হাট বসিয়ে টোল আদায় করছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার আবু সাঈদ জানান, বৃহস্পতিবার কলেজ মাঠে হাট বসায় শিক্ষার্থীরা কলেজে আসে না। সে কারণে বেশিরভাগ শিক্ষকই অনুপস্থিত থাকেন। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে, ইজারাদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না।
নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ মাঠেই নির্মিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর পলাশডাঙা যুব শিবিরের স্মৃতিস্তম্ভ এবং নির্মাণাধীন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একটি মুক্তিযু্দ্ধ জাদুঘর। এমন একটি পবিত্রতম স্থাপনার সামনে হাট বসায় জায়গাটি প্রায় সময়ই থাকে অপরিচ্ছন্ন। আগ্রহী দর্শনার্থীরা এসে এমন চিত্র দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান। তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী আরশেদ আলী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, প্রশাসনের প্রতি দাবি অবিলম্বে কলেজ মাঠে হাট বসানো বন্ধ করা হোক।
হাটের ইজারাদার মো. আলহাজউদ্দিন বলেন, অনেক আগে থেকেই কলেজ মাঠে হাট বসে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, হাটের কারণে তারা বৃহস্পতিবার কলেজে যায় না। শুধুমাত্র হাটের জন্য বছরে প্রায় ৫০ দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখার মান খারাপ হচ্ছে ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনোভাবেই হাটবাজার বসতে পারে না। আমি শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।