মাধ্যমিকে ভালো ফলের পর এবার টেনশন একাদশ শ্রেণিতে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে। কারণ, যে সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে, মানসম্মত বা কাঙ্খিত কলেজগুলোতে সে সংখ্যক আসন নেই। আবার কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে মোট আসন সংখ্যা নিয়ে দুইরকম তথ্য দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এবং শিক্ষাবোর্ডসমূহ।
জানতে চাইলে ব্যানবেইসের পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিকে সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ শাখায় রয়েছে প্রায় ১১ লাখ। মাদ্রাসায় রয়েছে এক লাখ আট হাজার। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ব্যানবেইসের হিসাবে, মোট আসন ঘাটতি থাকবে ২৯ হাজারের বেশি।
অপরদিকে, আন্ত:শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, গত বছর যে পরিমাণ আসন ছিল, এবারও তাই আছে। একাদশ শ্রেণিতে আসনের কোনো সংকট নেই। গত বছরের হিসাবে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন সব কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন সংখ্যা ১৯ লাখ ৬৬ হাজার। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাস করেছে মোট ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকে আসন ফাঁকা থাকবে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৮৯৬টি।
গরমিলের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের মূল হিসাবটা আমাদের কাছে থাকে। ব্যানবেইসের হিসাবে যদি কমও হয়ে থাকে, তাহলে তা সমন্বয় করে নেওয়া হবে। কোনো আসন সংকট থাকবে না।
এদিকে, রাজধানী ঢাকার নামিদামি ৪০টি কলেজসহ সারাদেশের বিভাগীয় ও জেলা সদর মিলিয়ে মানসম্মত প্রায় শতাধিক কলেজে একাদশ শ্রেণিতে আসন সংখ্যা এক ৮০ হাজারের মতো। অথচ এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। সে হিসাবে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়েও প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।
মেধার ভিত্তিতে ভর্তি : এবার একাদশ শ্রেণিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মূল আসনে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। তবে বিশেষ অগ্রাধিকারের (কোটা) আবেদনকারী থাকলে মোট আসনের অতিরিক্ত (মুক্তিযোদ্ধা ৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদর ৩ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দপ্তর ২ শতাংশ, বিকেএসপি শূন্য দশমিক ৫ এবং প্রবাসী শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ) শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় 'একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালা' চূড়ান্ত করা হয়।
নীতিমালার বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি কলেজে তিনশ' আসন থাকলে শতভাগ মেধায় ভর্তি করা হবে। আবেদনকারীর মধ্যে কোটাধারীদের কেউ সুযোগ না পেলে তাদের মূল আসনের বাইরে সংশ্নিষ্ট কলেজ নির্ধারিত কোটায় ভর্তি করতে পারবে। বিগত দিনে দেখা গেছে, ১১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ থাকায় অনেক কলেজে আসন শূন্য থাকে। মেধাবীরা বঞ্চিত হয়।
গতবারের মতো এবারও অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করা যাবে। এতে নেওয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এর জন্য ১২০ টাকা দিতে হবে। তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না।
ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ১৩ মে : মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ভর্তির জন্য অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৩ মে থেকে। আবেদনের শেষ সময় ২৪ মে। তবে পুনর্নিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে, তাদের আবেদন আগামী ৫ ও ৬ জুন গ্রহণ করা হবে। একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে মেধা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তবে ভর্তিতে আগের মতো এবারও স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাবে। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। এরপর আরও একাধিক ধাপে ফল প্রকাশ, মাইগ্রেশনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে ২৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম চলবে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।