দেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, যা সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য ভাবনার বিষয়। শেকড়েই এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে বাংলাদেশ একসময় অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্কুলপড়ুয়া কিংবা সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া কিশোর-কিশোরীরা বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। চুরি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে এরা। দিন দিন এরা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। এই সমাজে জন্ম নিয়ে এ সমাজেই ত্রাস সৃষ্টি করছে এরা। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধনটি লিখেছেন হিমেল আহমেদ।
বিভিন্ন কারণে এই কিশোররা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে, গ্যাং তৈরি করে হয়ে উঠছে সন্ত্রাসী। উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার, রাজনৈতিক ছত্রছায়া কিংবা অভিভাবকদের অবহেলা এর অন্যতম।
এদের স্কুল ব্যাগে বইখাতার পাশাপাশি মারাত্মক অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে। এরা এসব দামি অস্ত্র পাচ্ছে কোথায়? এদের মাদকদ্রব্য কেনার টাকা দিচ্ছে কারা? এরকম হাজারো প্রশ্ন আমাদের সবার মনে।
দেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা আসলে কত তার নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতিটি জেলায় এদের দল বা গ্যাং রয়েছে। এদের হাতে দামি মোবাইল ফোন থাকে। ইন্টারনেটের সুবাদে এরা সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই এই সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তাই এই কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন অপরাধের খবর পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসরাফকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে কয়েকজন কিশোর। ঢাকার ১৬ বছর বয়সী আদনান উত্তরার একটি গ্যাংয়ের সদস্য ছিল এবং তাকে মূলত অন্য গ্যাংয়ের সদস্যরা হত্যা করে।
২০১৭ সালের অক্টোবরে জুনিয়র-সিনিয়র বিতর্কে রাজধানীর চকবাজার এলাকায় হাসান আলী নামের ১৪ বছর বয়সী জেএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে একই এলাকার কয়েকজন কিশোর। বস্তুত সামান্য বিষয়ে কথা কাটাকাটি বা মতানৈক্য হলেই এরা খুন পর্যন্ত করতে দ্বিধান্বিত হচ্ছে না!
আইন কিংবা প্রশাসনের ভয় উপেক্ষা করে এসব কিশোর প্রকাশ্যেই জড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী সংঘাত-হানাহানিতে। এদের পেছনে কে আছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। কার ছত্রছায়ায় এরা এতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার।
রাজনৈতিক ছত্রছায়া যেন কিশোরদের ভুল পথে ধাবিত না করে সেদিকে রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ রাখা উচিত। ছাত্র রাজনীতিতে একটা সীমাবদ্ধতা রাখা প্রয়োজন। স্কুলপড়ুয়া কিংবা সদ্য কলেজপড়ুয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। পরিণত বয়সের আগে কোনো কিশোরকে রাজনীতিতে যুক্ত করা উচিতই নয়।
এ বিষয়ে বিশেষ করে অভিভাবকদের দায়িত্ববান হতে হবে। অভিভাবকদের অবহেলায় সন্তান ভুল পথে পা বাড়ায়। সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- এসব বিষয়ে নজরদারি করতে হবে। প্রায়ই দেখা যায়, অভিভাবকদের অবহেলায় সন্তান অসৎ সঙ্গে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
তারপর জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধে। জরিপ করে জানা গেছে, কিশোর অপরাধীদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ইয়াবা সেবনের টাকা না পেয়ে বাবা রঞ্জন বড়ুয়াকে ছুরিকাঘাতে খুন করে তার ছেলে রবিন বড়ুয়া।
এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই কিশোরদের বইখাতা নিয়ে পড়াশোনা করার কথা, ব্যাট বল নিয়ে মাঠে খেলা করার কথা। এদের সঠিক পথে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।
হিমেল আহমেদ : প্রাবন্ধিক