কিশোরগঞ্জে শাস্তির পরও থামছেনা গাইড ব্যবসা! - দৈনিকশিক্ষা

কিশোরগঞ্জে শাস্তির পরও থামছেনা গাইড ব্যবসা!

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি |

সরকার গাইড বই বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ধরা পড়লে শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সৃজনশীল সহায়ক ও গাইড বই বেপরোয়া কায়দায় অবাধে বিক্রি করছে শুধু তাই নয়, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এসব বই বিক্রির ক্ষেত্রে গলাকাটা লাভ করার জন্য ‘খুচরা বিক্রয় নীতিমাল বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করে এক ধরনের নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারী বিধান প্রণয়ন করেছে।

এসব বিধানে ব্যবসায়ীরা লিখিত মূল্যের সর্বোচ্চ কতভাগ ছাড় দিয়ে বই বিক্রি করতে পারবেন, এ বিষয়ে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের কম দামে কোন ব্যবসায়ী বই বিক্রি করলে তার ওপর ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। এসব বিধান পুস্তক ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে যেমন ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে, অন্যদিকে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের বিক্রয় নীতিমালা কমিটি মনগড়া এবং অনির্বাচিত। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শাকের আহমেদ হাদীকে, আর সদস্য সচিব করা হয়েছে মো. ফজলুল কবিরকে।

কিশোরগঞ্জ জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ‘২০১৭ সালের খুচরা বিক্রয় নীতিমালা সংক্রান্ত নির্দেশাবলী’ নামে এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এটি গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্কুল ও মাদ্রাসা কোম্পানির সৃজনশীল সহায়ক দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত নেট মূল্যের সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কমিশন দেয়া যাবে। তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসার সকল গ্রামার, ব্যাকরণ, আরবি কমিউনিকেটিভ, আরবি ব্যাকরণ, নৈব্যক্তিক গাইড অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মাদ্রাসা পুস্তকে উল্লেখিত মূল্য থেকে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কমিশন দেয়া যাবে। দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল সব কোম্পানির গাইড, নৈর্ব্যক্তিক গাইড ও সাজেশন বইয়ে নেট মূল্য থেকে সর্বোচ্চ ৫ ভাগ কমিশন দেয়া যাবে।

ভোকেশনালের সব কোম্পানির বই নেট মূল্যের ওপর সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কমিশনে বিক্রি করতে হবে। কলেজের টেক্সট বুক (বাংলা, ইংরেজি ও সহপাঠ) বইসমূহ পুস্তকে উল্লেখিত মূল্যে বিক্রি করতে হবে। বোর্ড অনুমোদিত ও অননুমোদিত সব উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর বইসমূহ পুস্তকে উল্লেখিত মূল্য থেকে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কমিশনে বিক্রি করতে পারবে। সমিতির বিধানে এ রকম ১৯টি নির্দেশনা উল্লেখ করা আছে।
সমিতির ‘বিশেষ নির্দেশাবলী’ কলামে বলা হয়েছে, কোন অবস্থাতেই ক্রেতা সাধারণের কাছে বিক্রয় নীতিমালা প্রকাশ করা বা মুখে বলা যাবে না, সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে। নির্দেশনার কম মূল্যে বই বিক্রি করলে সর্বনি¤œ ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা হবে বলে বিশেষ নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে। জেলা শহরসহ সব উপজেলায় একই নীতিমালার আলোকে বই বিক্রি করতে হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে।

অথচ সমিতির নির্ধারণ করে দেয়া হারের বেশি কমিশনে বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের ভালো অঙ্কের লাভ থাকে। আর সেই কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যবসায়ীরা বেশি কমিশনে বই বিক্রি করে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে চান বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। অথচ বেশি কমিশনে বই বিক্রি করলে সমিতির রোষানলে পড়তে হয়, অর্থদ- গুণতে হয়। বিভিন্ন বইয়ের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর আল আরাফাহ প্রকাশনীর বাংলা প্রথম পত্র গাইড বইয়ের মূল্য লেখা আছে ২৫৬ টাকা। সমিতিভুক্ত ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২৫ ভাগ কমিশনে ১৯২ টাকায়। আর সমিতির বাইরের ব্যবসায়ীরা ৪০ ভাগ কমিশনে ১৫৩ টাকায় বিক্রি করেও খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেন ৩৬ টাকা।

নবম শ্রেণীর আল আরাফাহ প্রকাশনীর ইংরেজি গ্রামার বইয়ের মূল্য লেখা রয়েছে ৬৯৩ টাকা। সমিতির বিধান রয়েছে ১০ ভাগ কমিশনে ৬২৩ টাকায় বিক্রির। কিন্তু বইটির সর্বোচ্চ ক্রয়মূল্য ৫১৭ টাকা। ফলে ২০ ভাগ কমিশনে বিক্রি করলেও ৩৭ টাকা লাভ থাকে। কিন্তু সমিতির দামে বিক্রি করলে লাভ হয় ১০৬ টাকা। ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, যে কমিটির নামে ব্যবসায়ীদের ওপর বিক্রয় নীতিমালা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, এটি কোন নির্বাচিত কমিটি নয়, একটি মনগড়া কমিটি। এছাড়া স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে বই আনতে পারেন না। তারা সমিতির নেতাদের দোকান থেকে বই নিয়ে বিক্রি করেন। সমিতির নির্দেশনার বাইরে বই বিক্রি করলে এসব ব্যবসায়ীদের বই দেয়া হয় না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। একজন পুস্তক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সমিতি অন্যায় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় এ ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ী সদর থানায় গত ১১ সেপ্টেম্বর সাধারণ ডায়রিও করেছেন।এ ব্যাপারে বিক্রয় নীতিমালা কমিটির আহ্বায়ক শাকের আহমেদ হাদী এবং সদস্যসচিব ফজলুল কবীরের বক্তব্য নেয়ার জন্য তাদের মোবাইলে ফোন করলেও তারা প্রথমে রিসিভ করেননি। পরক্ষণেই আবার ফোন করলে দু’জনেরই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.020926952362061