কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ টাকা ফেরত দিল স্কুলছাত্রী - দৈনিকশিক্ষা

কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ টাকা ফেরত দিল স্কুলছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |
কুড়িয়ে পাওয়া দুই লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সততার নজির গড়লো খুলনার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী মম মল্লিক (১৪)। জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলবুনিয়া হাটবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে।
 

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কথা হয় মমর সঙ্গে। সে বলে, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে আমার প্রাইভেট পড়া ছিল। সেজন্য আমি বাড়ি থেকে বের হই। এরপর আমি ভ্যানে করে বটিয়াঘাটা বাজারে যাই। বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে একটি ব্যাগ দেখতে পাই। ভ্যান থেকে নেমে ব্যাগটি খুলে দেখি এর ভেতর টাকা রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগটি বন্ধ করে নিয়ে থানায় যাই।

 

‘থানায় গিয়ে দেখি ব্যাগের মালিকরা থানাতেই রয়েছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, আমি ব্যাগটি কোথায় পেয়েছি। আমি বললাম। পরে পুলিশ মালিকদের কাছে জানতে চাইল যে, টাকাগুলো যে তাদের, সেটির প্রমাণস্বরূপ কী আছে?  তখন তারা ব্যাগে থাকা টাকার পরিমাণ ও কিছু কাগজপত্রের কথা বলল। তারপর পুলিশ মিলিয়ে দেখে ঠিক আছে। পরে সেই ব্যক্তিদের ব্যাগসহ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।’
 
মম মল্লিকের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শঙ্কর মল্লিক। তিনি  বলেন, আমার তিন মেয়ের মধ্যে মম ছোট। ০৯ সেপ্টেম্বর সকালে বৃদ্ধ এক চালকের ভ্যানে প্রাইভেট পড়তে হেতালবুনিয়ার নাহারিতলায় যাচ্ছিল সে। পথে থানা সংলগ্ন ঝোপের কাছে একটি ব্যাগ দেখতে পায়। ব্যাগটি উঠিয়ে তাতে টাকা দেখতে পায় মম। এরপর ওই ভ্যান চালককে সঙ্গে নিয়েই সে থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ব্যাগটি জমা দেয়। সেখানে গিয়ে দেখে যাদের টাকা হারিয়েছে তারাও থানায় এসেছে। 
 
‘এসময় পুলিশ তাদের কাছে ব্যাগে কী কী আছে? কত টাকা? কী ধরনের নোট? এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তাদের মধ্যে একজন তার পরিচয় দিয়ে বলেন তার নাম প্রকাশ। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের জমি রেজিস্ট্রেশন করতে দুই ব্যাগে করে টাকা নিয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলায় আসছিলেন। পথে একটি ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা ছিল। তার দেওয়া টাকার বিবরণের সঙ্গে ব্যাগে থাকা টাকা মিলে যাওয়ায় পুলিশ তাদের ব্যাগটি দিয়ে দেয়। এরপর আমার মেয়ে থানা থেকে চলে আসে। বাসায় আসার পর আমি তার কাছ থেকে ঘটনাটি জানতে পারি।’
 
মেয়ের এমন সততায় বাবা হিসেবে তিনি গর্বিত বলে জানান অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শঙ্কর মল্লিক।
 
এদিকে স্কুলছাত্রীর সততায় মুগ্ধ হয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।
 
হোগলবুনিয়া হাটবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুজিৎ কুমার রায়  বলেন, আমাদের ছাত্রী মম মল্লিক একটি টাকাভর্তি ব্যাগ পায়। এরপর সে ব্যাগটিসহ থানায় গিয়ে টাকাটা প্রাপককে দেয়। আমরা শ্রেণিকক্ষে সব সময় শিক্ষার্থীদেরকে বলি, তোমরা সব সময় সৎ পথে থাকবা, সত্য কথা বলবা, ভালো ব্যবহার করবা। আমাদের উপদেশগুলো তার মনে গেঁথে গেছে। আর সেই উপদেশের ভিত্তিতেই সে অনেক বড় একটি কাজ করেছে। 
 
‘এতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা গর্বিত। প্রতিটা ছেলেমেয়ে যেন এমন কাজ করে, এটাই আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি। মম যেন জীবনে সার্থক হয়, সেজন্য আমরা দোয়া করি। সে একজন গুণী মানুষ হয়ে যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে, আমরা সেই কামনা করছি।’
 
জানা গেছে, আগামী ১০ অক্টোবর বটিয়াঘাটায় অনুষ্ঠেয় বটিয়াঘাটা অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মমকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
 
এদিকে স্কুলছাত্রীর এই সততার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সবাই তার প্রশংসা করতে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি তার জন্য শুভকামনাসহ আশির্বাদ করেন।
 
গোড়া গোলদার নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো বোন তোমার জন্য। ‘লোভ’ নামক শব্দটি থেকে বের হয়ে এসে যে সততার পরিচয় তুমি দিলে, এইটা হলো তোমার ঈশ্বরপ্রাপ্তি। এই রকমের ভালো কাজ করলে দেখবে ঈশ্বরই তোমার পেছনে দৌঁড়াবে। তোমাকে আর তার পেছনে দৌঁড়াতে হবে না। এবং প্রণাম জানাই তাদের যারা তোমার মতো সৎ কন্যার জন্ম দিয়েছেন।
 
রাজু হালদার নামে আরেকজন বলেন, উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছো তুমি। তোমার সততাই তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুভকামনা রইল বোন।
 
এছাড়াও আরো অনেকেই অভিনন্দন-শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি প্রার্থনা করেছেন স্কুলছাত্রী মম মল্লিকের জন্য।

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068619251251221