কুয়েটে ভিন্নমত দমনে হামলা মারধর - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাঙ্গনে টর্চার সেল-৫কুয়েটে ভিন্নমত দমনে হামলা মারধর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

খুলনার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হামলা-মারধরসহ পিটিয়ে ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠনের কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমনের অভিযোগ বেশ পুরোনো। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আবাসিক হলগুলোর গেস্টরুম শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। তবে সম্প্রতি গেস্টরুমে নিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা অনেকটা কমেছে বলে জানা গেছে।রোববার (২০ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন হাসান হিমালয় 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় দলবেঁধে হামলা বা মারধরের ঘটনা ঘটে না। তবে র‌্যাগিংয়ের নামে জুনিয়রদের নির্যাতনের অভিযোগ শোনা যায় মাঝে মধ্যে। গত ৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ভেতরে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং  বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র পাপ্পু কুমার মণ্ডলকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে খুলনার সরকারি বিএল কলেজের হল থেকে ছাত্রদল কর্মীদের পিটিয়ে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে 'শিবির' ও 'ছাত্রদল' সন্দেহে সাধারণ ছাত্রদের পেটানো হয়েছে। এর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হল থেকেও ছাত্রদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়েটের ছয়টি আবাসিক হল, খুলনা মেডিকেল কলেজের তিনটি হল এবং বিএল কলেজে পাঁচটি হল রয়েছে। প্রতিটি হলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিন্নমত কিংবা কারও চলাফেরায় সন্দেহ হলে নির্যাতনের শিকার হন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ সময়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হলের গেস্টরুমে ডেকে পাঠানো হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে চলে নির্যাতন। মারধর করে অনেককে 'শিবির' অথবা 'জঙ্গি' পরিচয় দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

কুয়েটের কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কুয়েটে গেস্টরুম কালচার শুরু হয় ২০১০ সালের পরে। বিশ্ববিদ্যালেয় ওই সময়ের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক পরিচালক শিবেন্দ্র শেখর হালদারের সহযোগিতায় ওই বছর হলগুলোর দখল নেয় ছাত্রলীগ নেতারা। প্রথম পর্যায়ে হলগুলো থেকে ছাত্রদল কর্মীদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামিয়ে অনেককে পেটানো হয়। এসব বিষয়ে অভিভাবকরা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করলেও তিনি এটা বন্ধ করতে উদ্যোগী হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন, রেজাউল ও মেহেদীকে ফজলুল হক হলের গেস্টরুমে নিয়ে সারারাত মারধর করা হয়। ২৫ মার্চ সকালে 'শিবির নেতা' পরিচয় দিয়ে তাদের খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরের মাসেও চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতারা। ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থান করায় তার নাম প্রকাশ করা হলো না। এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি চারজনকে বেদম মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থীর চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি দু'জনকে একইভাবে নির্যাতন করে পুলিশে দেওয়া হয়।

কুয়েটে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে মারধর করা হয় ২০১৭ সালের ১ মে। ওই রাতে বিভিন্ন হলের ২১ শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু হলের গেস্টরুমে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে শিবির পরিচয়ে পুলিশে দেওয়া হয়। ওই রাতের হামলায় লুৎফর রহমান নামের এক শিক্ষার্থীর কিডনি এবং একজনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুয়েটের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শিবেন্দ্র শেখর হালদার। তিনি বলেন, নির্যাতনের বিষয় আমার জানা নেই। পুলিশ যাদের ধরেছে, তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই ধরেছে।

এ ব্যাপারে কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি আবুল হাসান সোহান বলেন, আগে এমন নানা ঘটনা ঘটেছিল। আমি সভাপতি হওয়ার পর এমনটা আর ঘটেনি। নিরীহ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়নি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. আসানুর ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নেই। তাই কাউকে মারধরের প্রয়োজন পড়ে না।

বিএল কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল্যাহ দিপু বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের মারধর করে হলগুলো থেকে বের করে দেয়। এরপর আর আমরা হলে ফিরতে পারিনি। তবে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিশাত ফেরদৌস অনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। এখনও তারা হলে ফেরেননি।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065250396728516