কোনো রকম ভবিষ্যত্ চিন্তা-ভাবনা বা ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা না করেই দেশে সৃজনশীল প্রশ্নের পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। সহজে পরীক্ষা পাস আর অপরিকল্পিত সৃজনশীল পদ্ধতির কারণেই সারা দেশে যন্ত্রণাদায়ক ও অনৈতিক কোচিং আর গাইড ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। আমাদের শিক্ষকদের প্রায় শতভাগই এই পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেননি। মেধাবী শিক্ষকরা এই নতুন পদ্ধতি বুঝতে পারলেও বেশিরভাগ শিক্ষক এই পদ্ধতিতে পড়াতে পারছেন না বা প্রশ্নপত্রও প্রণয়ন করতে পারছেন না। তাঁরা গাইড বই পড়ান এবং গাইড বই থেকেই প্রশ্ন করেন। বছরের প্রথমে প্রতিটি বিষয়ের গাইড বই কিনতে বিদ্যালয় থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়। আবার ২/৩ মাস পর নতুন করে অন্য একটি গাইড বই কিনতে বলা হয় কারণ পরীক্ষার প্রশ্ন নাকি এই নতুন গাইড বই থেকে দেওয়া হবে। পরবর্তী পরীক্ষার আগে আবারও একই কথা বলে নতুন করে গাইড কিনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এভাবেই বছরে প্রতিটি বিষয়ের একাধিক গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হয়। এর কারণ গাইড বই ব্যবসার সঙ্গে বেশিরভাগ শিক্ষকের সম্পর্ক রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে যে পাঠ্যবই দেওয়া হয় তা আমাদের কোনো কাজেই লাগছে না। জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার বেশিরভাগ প্রশ্নই আসে বিভিন্ন গাইড বই থেকে। বাজারে বিভিন্ন রকমের অসংখ্য গাইড বই রয়েছে আর সবগুলো কেনা বা পড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন আসে যা আমাদের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে একেবারেই মিল নেই। তখন আমাদের পক্ষে এই সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয় না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় গণিত ও বিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে। মূল বইয়ের সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্য নেই গণিতের এমন প্রশ্নের সমাধান পরীক্ষার হলে বসে করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া বিজ্ঞানের ক্লাস কোনো বিদ্যালয়েই ঠিকমতো হয় না। বিজ্ঞানের সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি একেবারেই অর্থহীন ও অবাস্তব।
শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য মূল পাঠ্যবই থেকেই বড়, মাঝারি ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। আর শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শুধু বাংলা বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্ন করা উচিত—কারণ বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। অন্যদিকে শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক ও অনৈতিক কোচিং ব্যবসার কারণে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। শিক্ষকদের কোচিংয়ে পড়লে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন পাওয়া যায় আবার পরীক্ষার খাতায় নম্বরও বেশি পাওয়া যায়। এভাবেই আমাদের সম্মানিত শিক্ষকগণ শিক্ষার নামে আমাদের দুর্নীতি শেখাচ্ছেন।
সকল প্রকার দুর্নীতি মুক্ত করে শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। কোচিং ও গাইড নিষিদ্ধ এবং সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির সংস্কার করতে হবে। একশ্রেণির শিক্ষক আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে বর্তমানে অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছেন। আমরা দেশে এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই না।
সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ফরিদপুর