কোটা নয়, পৃথক নিয়োগ - Dainikshiksha

কোটা নয়, পৃথক নিয়োগ

প্রকৌশলী রিপন কুমার দাস |

চাকরিতে কোটাভিত্তিক নিয়োগ প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা, তাই কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও উপজাতি, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। কোটাভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই প্রার্থী সাধারণ পদসহ বিভিন্ন কোটায় অংশ গ্রহণ করতে পারেন। ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হন। আর পৃথক নিয়োগের ব্যবস্থা করলে একজন প্রার্থী একটি মাত্র সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আবেদন করতে পারবেন। ফলে অন্য মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন না। 

জেলা পর্যায়ের সকল কোটা পুরোপুরি বিলুপ্ত করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির সকল পদে জেলা পর্যায়ে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । এছাড়া মোট নিয়োগে  ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১২ ভাগ, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতির জন্য ২ ভাগ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ ভাগ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০ ভাগ পৃথক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ২০২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি ২ বছরে ১ ভাগ করে কমাতে হবে অর্থাৎ ২০ বছরের অর্থাৎ ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

নিয়োগ কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়োগ প্রদানকারী দফতরের সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও উপজাতিদের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনকে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবন্ধীদের ১ম শ্রেণির গেজেটেড পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকমিশনের সঙ্গে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়/ প্রতিবন্ধী বিষয়ক অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে এবং নিয়োগ বোর্ডে অবশ্যই ৯০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী/উপজাতি/ধর্মীয় সংখ্যালঘু) থাকতে হবে। 

পৃথক নিয়োগের ক্ষেত্রে সামরিক, আধা সামরিক, বেসামরিক, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি ব্যাংক, সরকারি লিমিটেড কোম্পানি, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান, সরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠান সমুহের দফতর, অধিদপ্তর, বিভাগওয়ারি সকল প্রতিষ্ঠানের সরকারি বেতন স্কেলের ১ম থেকে ২০তম গ্রেডের সকল পদের বিপরীতে শতকরা হারে পৃথক নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগের জন্য প্রতি বছর সকল পদের সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক অনলাইন ডাটাবেইজ আপডেট করতে হবে, শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট পদে প্রাপ্য ১২ ভাগের তুলনায় বেশি থাকে, তবে মোট শূন্য পদের ১২ ভাগের পরিবর্তে কম পক্ষে ৬ ভাগ পর্যন্ত আবার যদি প্রাপ্যতার তুলনায় যদি কম থাকে, তবে মোট নিয়োগকৃত পদের সর্বোচ্চ ৪৯ ভাগ পর্যন্ত নিয়োগ দিয়ে সমন্বয় করা যেতে পারে। সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি পৃথক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে তা সংবিধানে উল্লেখপূর্বক বেসামরিক পদের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য মাদ্রাসায় ১২ ভাগ পৃথক নিয়োগের পরিবর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সাথে সমন্বয় করা যেতে পারে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পৃথক শাখা খুলে মোট বাজেটের ১২ ভাগ নিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে পৃথক সংখ্যালঘু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (টোল, বিদ্যা মন্দির) স্থাপন করতে হবে। 

এছাড়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রার্থী না পেলে এর কারণ উল্লেখসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভারতের মতো সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পলিটেনিক, ভোকেশনাল স্থাপন করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চাকরির উপযুক্ত করে তৈরি করা প্রয়োজন। 

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সমুহ নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।  নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল পদে আনুপাতিক হারে একই বিজ্ঞাপনে পৃথক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সকল পদে একই দিনে সকলকে নিয়োগ পত্র দিতে হবে। যদি সকল কার্যক্রম একই সঙ্গে সম্পন্ন করা না হয়, তবে আদালতের মাধ্যমে নিয়োগের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা যেতে পারে।

কোটার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল একই ব্যক্তি বিভিন্ন কোটায় অংশ গ্রহণ করে মেধাবীদের বঞ্চিত করে, অর্থাৎ একজন প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি যদি মুক্তিযোদ্ধা হয়, তবে সে প্রথমে মেধা তালিকার মাধ্যমে নিয়োগ না পেলে সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেতে পারে, অথবা প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ পেতে পারে, যদি তা না হয় তবে যে, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি কোটায় নিয়োগ পেতে পারে, তা না হলে সবশেষে জেলা কোটায় নিয়োগ পেতে পারে। এর থেকে মুক্তির জন্য কোটা উঠিয়ে দিয়ে পৃথক  নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যেখানে আবেদনের শুরুতেই সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি, এবং প্রতিবন্ধী কোন স্তরে আবেদন করবে তা উল্লেখ থাকতে হবে।

একই ব্যক্তি একাধিক বিকল্প সুযোগ পাবে না অর্থাৎ  ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি কিন্তু মণিপুরী মুসলমান তিনি যদি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি স্তরে আবেদন করেন. তবে সাধারণ স্তরে আবেদন করতে পারবেন না। আবার আবেদনকারী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি হিন্দু হলে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি স্তরে আবেদন করলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স্তরে আবেদন করতে পারবেন না। তাই সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্টি ও উপজাতি, এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত ভাবে প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।    

লেখক : ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00347900390625