সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন, দেশে শিক্ষার মান ক্রমাগতভাবে নিচে নামছে। সেটি প্রাথমিক শিক্ষাই হোক আর উচ্চশিক্ষাই হোক। এ নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে অনেক টানাহেঁচড়া হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কম হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। সোমবার (২২ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষার মানের এই ক্রমাবনতির প্রধান কারণ ভালো শিক্ষকের অভাব। নিকট-অতীতে আমরা দেখেছি, যারা আর কোথাও কোনো চাকরিবাকরি জোগাড় করতে পারছে না, তারাই সংশ্লিষ্টদের কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিত। সাম্প্রতিক সময়ে বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা কিছু বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়োগসংক্রান্ত বিধিমালার অধীনে শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু তার পরও মেধাবীরা খুব একটা আসছে না শিক্ষকতায়। প্রাথমিক শিক্ষায় তো নয়ই। গতকাল দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেধাবীদের না আসার অন্যতম কারণ প্রাথমিক শিক্ষায় ক্যাডার সার্ভিস না থাকা। এখানে কেউ প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলে তাঁকে সারা জীবন একই পদে থেকে যেতে হবে। অতীতে পদোন্নতির কিছু সুযোগ থাকলেও ১৯৯৪ সালে সেই সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কৃষি, খাদ্য, পশুসম্পদসহ দেশে বহু বিষয়ে ক্যাডার সার্ভিস থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষায় ক্যাডার সার্ভিস না থাকার বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। জানা যায়, ২০০০ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভাগ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা করার পর সেই প্রক্রিয়াটিও বন্ধ হয়ে যায়। এখন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ হয়।
প্রাথমিক শিক্ষায় ক্যাডার সার্ভিস থেকে কেউ আসে না। প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টির ব্যাপারে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। তবে তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। ফলে দ্রুতই কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করার সুযোগ কম।
যেকোনো শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে ভালো মানের প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। দুর্বল ভিত্তি নিয়ে যেমন বহুতল ইমারত নির্মাণ করা যায় না, তেমনি মানহীন প্রাথমিক শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে ভালো মানের উচ্চশিক্ষাও আশা করা যায় না। আমাদের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি বুঝতে হবে। আমরা আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এসংক্রান্ত নীতিমালা ও বিধি তৈরির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করা হবে এবং উন্নত মানের শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান এগিয়ে নেওয়া হবে।