দেশে ‘মেডিকেল অনকোলজি’ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। উন্নত বিশ্বে ক্যান্সার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় ‘মেডিকেল অনকোলজি’ বিষয়ে। বস্তুত রোগ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, তারা হলেন মেডিকেল অনকোলজিস্ট। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতেও ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রধান ভূমিকা রাখছেন মেডিকেল অনকোলজিস্টরা। অথচ দেশে এ বিষয়ক উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। জানা গেছে, ক্যান্সারবিষয়ক উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী চিকিৎসকদের জন্য দেশে বেশকিছু বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ থাকলেও এক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘মেডিকেল অনকোলজি’ বিষয়ে এফসিপিএস করার সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, দেশে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে এ বিভাগটি খোলার পর এখান থেকে মেডিকেল অনকোলজিস্ট বের হয়েছেন মাত্র ১৬ জন। উচ্চশিক্ষার সুযোগ না থাকাই যে এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে, তা বলাই বাহুল্য।
বিশ্বব্যাপী ৭৮ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে অসংক্রামক রোগে, যার বেশিরভাগই নিু ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশে ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছেন। প্রতি বছর রোগীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ হারে বাড়লেও বাড়ছে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা। এতে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা মেনে নেয়া কষ্টকর।
অভিযোগ রয়েছে, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা এবং এ বিষয়ক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে, যারা চায় না আমাদের এখানে ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি ঘটুক। এ চক্র নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নিজেদের অযৌক্তিক মতামত চাপিয়ে দিয়ে দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ভিত দুর্বল করে দিচ্ছে।
চক্রটি নিজেদের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ‘মেডিকেল অনকোলজি’ কোর্স এবং হাসপাতালগুলোয় বিভাগ খুলতে দিচ্ছে না; এমনকি এ বিষয়ে চিকিৎসকরা যাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী না হয়, সেজন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। এক্ষেত্রে নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভারি যন্ত্রপাতি আমদানিকারকরাও।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম স্বাস্থ্য খাত। তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বত্রই চলছে দুর্নীতির প্রতিযোগিতা। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য খাত ঘিরে গড়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদপ্তর ছাড়াও প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্বাস্থ্য বিভাগীয় অফিস, সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সব স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে সিন্ডিকেটের সরব পদচারণা। ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটন জরুরি।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা হবে প্রায় দ্বিগুণ। ক্যান্সার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল অনকোলজির বর্তমান হাল বজায় থাকলে এ বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় দেশের মেডিকেল কলেজগুলোয় ‘মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ’ খোলার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় এ বিষয়ে আসন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।