গবেষণায় 'চুরি' ঠেকাতে ভারতে চার ধরনের শাস্তি - Dainikshiksha

গবেষণায় 'চুরি' ঠেকাতে ভারতে চার ধরনের শাস্তি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রিসার্চের নামে 'টুকলি' বা নকল করা (প্লেগিয়ারিজম) ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি।

শুধু তাই নয়, ইউজিসি বলছে প্লেগিয়ারিজমের মাত্রার ওপর নির্ভর করবে শাস্তির পরিমাণ কতটা হবে। নজিরবিহীনভাবে তারা প্লেগিয়ারিজম-জনিত অপরাধের চারটি মাত্রা বা লেভেলও বেঁধে দিয়েছে।

সর্বোচ্চ মাত্রার 'টুকলি' করলে সংশ্লিষ্ট গবেষকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে - এমন কী শিক্ষকরা চাকরি পর্যন্ত খোয়াবেন বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা গবেষণা-কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত অনেকেই মনে করছেন, প্লেগিয়ারিজমের সমস্যা এতটাই ব্যাপক আকার নিয়েছে যে এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনও গতি নেই।

তবে গবেষণা পরিচালকদের মধ্যে অনেকেই আবার এই পদ্ধতির সঙ্গে একমত নন। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, 'অল্পস্বল্প' প্লেগিয়ারিজমের নামে ছাড় দেওয়া হলে এই প্রবণতাটাকেই আসলে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।

বিভিন্ন 'লেভেলে'র প্লেগিয়ারিজম-কে চিহ্নিত করে ইউজিসি যে নির্দেশিকাটি জারি করেছে তা নিয়ে তর্কবিতর্কও হচ্ছে বিস্তর।

তাতে বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় যে প্লেগিয়ারিজম বা টুকলির পরিমাণ গবেষণাপত্রের মাত্র ১০ শতাংশ - অর্থাৎ আগে প্রকাশিত অন্য কোনও নিবন্ধের সঙ্গে তার সাদৃশ্যের পরিমাণ বেশ কম - তাহলে অভিযুক্ত গবেষককে অব্যাহতি দেওয়া হবে, তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

এটাকে বলা হচ্ছে 'লেভেল জিরো' প্লেগিয়ারিজম। বিষয়টা শুধু অভিযুক্তকে জানানো হবে এক্ষেত্রে।

অপরাধটা 'লেভেল ওয়ান' বলে গণ্য হবে যদি দেখা যায় প্লেগিয়ারিজমের পরিমাণ ১০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে নতুন করে স্ক্রিপ্ট পেশ করতে বলা হবে।

ইউজিসি একটা প্লেগিয়ারিজমকে 'লেভেল টু' বলছে তখনই যখন দেখা যাবে সাদৃশ্যের পরিমাণ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে।

এই ধরনের বড়সড় টুকলিতে গবেষক বা ছাত্রছাত্রীদের অন্তত এক বছরের জন্য কার্যত সাসপেন্ড করা হবে - তারা এই সময়ের মধ্যে নতুন খসড়াও জমা দিতে পারবেন না।

কিন্তু সবচেয়ে বড় অপরাধ হল 'লেভেল থ্রি' প্লেগিয়ারিজম - যেখানে ৬০ শতাংশের বেশি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে।

ভারতের ইউজিসি বলছে, এরকম হলে গোটা গবেষণা প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল করে দেওয়া হবে। ওই গবেষক তো কালো তালিকাভুক্ত হবেনই, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তিনিও চাকরি হারাবেন।

বরোদার মহারাজা সয়াজিরাও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পরিমল ব্যাস বলছেন, "এই ধরনের টিয়ার-ভিত্তিক গ্রেডেশন করে প্লেগিয়ারিজম রোখা যাবে কি না সেটা অন্য বিতর্ক - কিন্তু সমস্যাটার মোকাবিলা করার জন্য যে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা নিয়ে কিন্তু কোনও দ্বিমত নেই।"

মি ব্যাস  আরও বলছিলেন, "প্লেগিয়ারিজমের এই সমস্যা, যেটাকে অ্যাকাডেমিক সার্কলে অনেকে 'কপি-পেস্ট' বলেও ডাকেন, সেই মহামারী থেকে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পুরোপুরি মুক্ত নয় এটাই চিন্তার কথা!"

প্লেগিয়ারিজম রুখতে তারা যে আপাতত ইউজিসির নির্দেশিকা অনুসরণে প্রস্তুত, সে কথাও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে ভারতের নামী পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ব্যাঙ্গালোরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের সাবেক অধিকর্তা ভি এস রামমূর্তি একেবারেই মনে করছেন না ইউজিসির প্রস্তাবিত দাওয়াই কোনও কাজে আসবে।

মি রামমূর্তি টেলিফোনে চেন্নাই থেকে বলছিলেন, "প্লেগিয়ারিজম হল প্লেগিয়ারিজম। একটা বাক্য চুরি করলেও চুরি - আবার রিসার্চ পেপার থেকে একটা চ্যাপ্টার চুরি করলেও চুরি। মাত্র একটা লাইন টুকেছি, এটা বললে অপরাধ কমে যায় না।"

"কাজেই আমি অন্তত মানতে পারছি না প্লেগিয়ারিজমের স্লাইডিং স্কেল করে এই প্রবণতাকে আটকানো যাবে!''

ইউজিসি-কে এই নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনা করারও আর্জি জানিয়েছেন এই প্রবীণ ভারতীয় বিজ্ঞানী।

২০১৪ সালে প্লেগিয়ারিজমের অভিযোগে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক উপাচার্য দীপক পেন্টালকে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছিল।

তার দুবছর বাদেই পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির তৎকালীন উপাচার্য চন্দ্রা কৃষ্ণমূর্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার।

এখন ইউজিসির এই নির্দেশিকা নিয়ে হয়তো আগামীতে আরও তর্কবিতর্ক হবে, কিন্তু প্লেগিয়ারিজমের সমস্যা যে ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকেও বিচলিত করেছে তা এই ফরমান জারি করা থেকেই পরিষ্কার।

 

সূত্র: বিবিসি 

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0079910755157471