অষ্টম শ্রেণির মাদরাসা ছাত্রী লামিয়া কয়েকদিন ধরেই পায়ের যন্ত্রণায় ভুগছে। পায়ের পাতা ও আঙ্গুলে ছোট ছোট ফোসকা উঠে ফুলে উঠেছে। সাথে চুলকানি ও প্রচ- যন্ত্রনা। আগষ্ট মাসে অষ্টম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা। পায়ে প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে তাকে প্রতিদিন প্রায় তিন কিলোমিটার কর্দমাক্ত মেঠো পথ ও হাটু সমান কাদা পানি পেরিয়ে মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত চারিপাড়া গ্রামের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর মতো শতাধিক শিক্ষার্থী কর্দমাক্ত রাস্তা ও দূষিত পানির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করতে করতে স্কাবিশ বা স্কিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলার বানাতিপাড়া আলহাজ্ব আঃ হালিম খান দাখিল মাদরাসা, চারিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সৈয়দগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন দুই-চার কিলোমিটার মাটির কর্দমাক্ত রাস্তা, হাঁটুসমান দূষিত পানি পেরিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। লালুয়া ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বছরের পর বছর ধরে ভেঙে পড়ে থাকলেও উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী ও হাজারো গ্রামবাসীকে বর্ষা মেীসুম শুরুর পরই পানিবন্দি অবস্থায় দৈনন্দিন কাজ করতে হচ্ছে।
চারিপাড়া গ্রামের গৃহবধু হেলেনা বেগম জানালেন, তার মেয়ে ফজিলাতুন নূর জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার এ কর্দমাক্ত রাস্তা, হাটু সমান পানি পেরিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে করতে পায়ের চর্ম রোগ দেখা দিয়েছে। স্কুল থেকে ফেরার পর প্রায় রাতেই যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে। চারিপাড়া গ্রামের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এ সমস্যায় ভুগছে বলে জানা গেছে।
কৃষক ও মৎস্যচায়ী রিপন হাওলাদার বলেন, মাছের ঘের ও চাষের জমিতে যে কীটনাশক দেয়া হয় এই বর্ষায় পানি ও কীটনাশক সব একাকার হয়ে গেছে। তাই জমে থাকা পানি দিয়ে হাঁটলেই পায়ের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
একাধিক অভিভাবক জানান, লালুয়া কোন ডাক্তার না থাকায় তাদের কলাপাড়া হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার এ দূরাবস্থার কারনে সামান্য এই রোগে তারা স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকদের কাছ থেকে এলার্জি জাতীয় ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। কিন্তু তাতে এ রোগ ভালো হচ্ছে না। ডাক্তার বলছে পঁচা পানিতে না হাঁটতে। কিন্তু ঘরে পানি, উঠানে পানি, রাস্তায় পানি। শুকনো জায়গা পাব কোথায়।
আলহাজ্ব আঃ হালিম খান দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আব্দুল আউয়াল জানান, চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া ও ধনজুপাড়া গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সবচেয়ে বেশি এই পায়ের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। কেননা তাঁদের প্রতিদিন গড়ে পাঁচ-সাত কিলোমিটার এ কাদা-পানি পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়্ াকরতে হচ্ছে। এ দূর্ভোগের কারণে এ বর্ষা জুড়ে মাদরাসায় উপস্থিতিও অনেকটা কমেছে ।