চাকরি না পেয়ে জালিয়াতিতে জড়ান পুলকেশ - Dainikshiksha

চাকরি না পেয়ে জালিয়াতিতে জড়ান পুলকেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অনার্স পাশ করার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন ঝালকাঠির গরংগলের যুবক পুলকেশ দাস বাচ্চু(৩২)। নিয়োগ পেতে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় মোবাইলে এসএমএস জালিয়াতির মাধ্যমে অংশ নেন একটি সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায়। কিন্তু নিজে ব্যর্থ হলেও টিকে যান তার সঙ্গে অংশ নেওয়া অপর একজন। এরপর কয়েক দফা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও জোটাতে পারেননি নিজের চাকরি। পরে ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখার আইটি অফিসার মোহাম্মদ কার্জনের পরামর্শ ও সহায়তায় নিজেই শুরু করেন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির কাজ। পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে শুরু হয় ভুয়া পরিচয় দেওয়া।

নিজে কোনও সরকারি চাকরি না পেলেও নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির সাহায্যে তার হাত ধরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছে অন্তত ২০ জন। নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলকেশ দাস বাচ্চু। ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর গত বুধবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেট এ কে এম মইন উদ্দিন সিদ্দিকীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিভুক্ত করা হয়।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলকেশ জানান, ২০০২ সালে এসএসসি ও ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশের পর ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে। ২০১২ সালে অনার্স শেষ হলেও মাস্টার্স শেষ করা হয়নি।

অনার্সের পর থেকে চাকরির চেষ্টা চলতে থাকে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের পরিচিত বড়ভাই নয়নের কাছ থেকে জানতে পারে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে জালিয়াতি করে নিয়োগ পরীক্ষা টেকা যায়। ২০১৫ সালে বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষক হিজল স্যারের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষায় অংশ নেয় পুলকেশসহ ৫ জন। পুলকেশসহ চারজন ব্যর্থ হলেও একজন পরীক্ষায় টিকে যায়।

২০১৫ সালের শেষ দিকে নিয়োগ পরীক্ষা জালিয়াতির অন্যতম হোতা ও স্মার্ট ডিভাইস সরবরাহকারী মোহাম্মদ কার্জনের সঙ্গে পরিচয় হয় পুলকেশের। তখন কার্জন ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানান।
জবানবন্দিতে পুলকেশ জানান, ২০১৬ সালের প্রথম দিকে কার্জনের কাছ ১৭ হাজার টাকা করে তিনটি স্মার্ট ডিভাইস কেনেন তিনি। এরপর শুরু হয় প্রার্থী সংগ্রহ প্রক্রিয়া। আর এই কাজে সহায়তা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তার বন্ধু আরিফ এবং কামরুল। জালিয়াতিতে সফলতা আসতে থাকে। এর সঙ্গে বাড়ানো হয় ডিভাইস সংখ্যা। বাকি ডিভাইসগুলোও কেনা হয় কার্জনের কাছ থেকে।

জালিয়াতির মাধ্যমে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইস পৌঁছে দেওয়া ও পরীক্ষা শেষে সংগ্রহ করার কাজটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র সোহেল করত বলে পুলকেশের জবানবন্দির ভাষ্য। তার মাধ্যমে জালিয়াতি অংশ নিয়ে অন্তত ২০ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বলেও দাবি তার।

গত ১৭ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে শ্যামলী থেকে পুলকেশ দাস বাচ্চুকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (উত্তর)। এর আগে ডিবি পুলিশের একই টিম গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারীচক্রের ১০ জনকে আটক করে। যাদের মধ্যে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাও ছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার, পুলকেশ দাস বাচ্চুসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে আসে। যারা সংঘবদ্ধভাবে নিয়োগ পরীক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি করে আসছে।

আদালতে দেওয়া পুলকেশের স্বীকারোক্তি ও গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা নিয়োগ পরীক্ষায় জড়িত বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (উত্তর) এডিসি গোলাম সাকলাইন। তিনি বলেন, আমরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের অভিযান চলছে।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036330223083496