সরকারি চাকরিতে যোগদান করার বয়স আসলে কত হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে অনেকেই অনেক মতামত প্রকাশ করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি চাকরিতে যোগদান করার ক্ষেত্রে বয়স কি কোনো বাধা হওয়া উচিত? বয়স বাড়ার সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করার যোগ্যতার সম্পর্কটা আসলে কতটুকু? ৩০ বছরের মানুষ কি ৩৫ বছরের মানুষের চেয়ে বেশি কর্মক্ষম? কিংবা সরকারি চাকরিতে যোগদান করার জন্য ৪০ বছর বয়স কি খুব বেশি? আধুনিক যুগে প্রতিটি মানবসম্পদকে কাজে না লাগিয়ে কাউকে বাদ দিয়ে কি সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব? প্রবীণদের যদি কাজের বাইরে রাখা হয়, তাহলে একটা বড় সংখ্যক মানুষের অর্থনৈতিক অবদান থেকে আমাদের বঞ্চিত করছি না?
ধরা যাক, একজন মানুষ ৪০ বছর হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সরকারি চাকরি করবেন। তার ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা আছে, দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি আছে, এমনকি তার বিশেষায়িত জ্ঞানও আছে। সে ক্ষেত্রে তার সরকারি চাকরি করতে অসুবিধাটা কোথায়? কর্মক্ষেত্রে তার অবদান অন্যদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ভালো হতে পারে। সরকারি খরচে অনেকেই বিদেশ যায় পড়াশোনার জন্য। এতে করে সরকারের অনেক টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু একজন মানুষ যদি নিজে থেকেই এসব ব্যবস্থা করে, তাহলে তো সরকারেরই লাভ। আমার ধারণা, এ ধরনের চাকরির সুযোগ থাকলে অনেক ভালো কর্মী বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে দেশেই ফেরত যেত। অন্তত কয়েক বছর দেশের জন্য তারা সেবা করতে পারত। আবার একজন ৫০ বছর বয়সী বেসরকারি উন্নয়নকর্মী জনস্বাস্থ্য খাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০ বছর কাজ করার পর সরকারি চাকরিতে আরও বড় আকারে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান, তাহলেও তো কোনো সমস্যা থাকতে পারে না।
সরকারকে উদ্যোগী হয়ে অনেক আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে, নতুন নতুন আইডিয়া বাস্তবায়নে নামবে, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। সেসব প্রতিষ্ঠানে বয়স্ক লোকদের সঙ্গে তরুণদের নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে একটা সেতু তৈরি করতে পারে। কারণ তরুণরা অনেক কিছু করতে চাইবে, ভুল থেকে শিখবে। কিন্তু অভিজ্ঞ লোক যদি পাশে থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্বক্ষণিক পরামর্শের লোকের অভাব হবে না। এ ক্ষেত্রেও বয়স কোনো বাধা হবে না বলেই মনে হয়।
প্রবীণদের সম্পর্কে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণাও আছে। অনেকেই মনে করে থাকেন, প্রবীণ মানেই কর্মক্ষমতাহীন। সেই পুরনো ভাবনা থেকে আমাদের বের হতে হবে। আগেই বলেছি, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে আমাদের দেশে এখন বেঁচে থাকার বয়স বাড়ছে। এ জন্যই প্রবীণদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না, কৌশলগত বাস্তবায়ন করতে হবে। এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন চাকরি করার পর কর্মজীবন থেকে অবসর নেবেন- সেটাই স্বাভাবিক। পরিবারের সঙ্গে জীবনের অন্য আনন্দগুলো উপভোগ করার জন্য তার অবসরের দরকার আছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক, মানুষ তার স্বেচ্ছায় যদি আরও কাজ করতে আগ্রহী থাকে, তাহলে কেন সে কাজ করতে পারবে না? যারা কাজ করতে চায় তাদের কোনোভাবেই আমরা জবরদস্তি করে কাজের বাইরে রাখতে পারি না। তার মানে এই নয় যে, একই রকম কাজ করতে হবে। প্রবীণরা একদম কাজ থেকে অবসর না নিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী পার্টটাইম বা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অফিস করতে পারেন। এভাবে তাদের মেধাকে দীর্ঘদিন কাজে লাগানো যাবে। তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তেমনি সরকারকেও ট্যাক্স দেওয়ার মাধ্যমে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবেন। প্রবীণ বয়সে কাজের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে করে একদিকে যেমন সরকারের পেনশনের চাপ কমতে থাকবে, তেমনি স্বাস্থ্য খাতে যে সরকার বা ব্যক্তির খরচ কমে যাবে।
ব্যাংকগুলো কিংবা যেসব এনজিও ঋণ প্রদান করে, তাদের বৈষম্যহীনভাবে প্রবীণদের জন্য আর্থিক সেবা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তারা তাদের সুবিধামতো কাজে জড়িত হতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষের কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তির বয়স যেন কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না হয়, সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।