সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী যে যুক্তি দিয়েছেন তা খণ্ডন করে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। তারা বলেছেন, আমরা তো আবেদনের সুযোগ চেয়েছি মাত্র। বয়স বৃদ্ধিতে রেজাল্ট বড় কোনো বিষয় নয়।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী একথা বলেন।
গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে ঢোকার বয়স না বাড়ানোর পক্ষে নিজের অবস্থান জানান। তার মতে, ৩৫ বছরে কেউ চাকরিতে ঢুকলে তার যথাযথ সেবা দেশ পাবে না। আর গত কয়েকটি বিএসএস পরীক্ষায় নবীনরা বয়স্কদের তুলনায় ভালো ফলাফল করেছে বলেও জানান।
এর প্রতিক্রিয়ায় চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, প্রথমত ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের ফলাফল যদি খারাপ হয়, তাহলে প্রতিযোগিতায় জুনিয়ররাই এগিয়ে থাকবে এবং নতুনরা বেশি সুযোগ পাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গত কয়েকদিন আগে সংসদে বলেছেন চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করলে নতুনরা বঞ্চিত হবেন। তাহলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্ববিরোধী কথা বলছেন। আর বয়স বৃদ্ধিতে রেজাল্ট বড় কোনও বিষয় নয়। আমরা তো আবেদনের সুযোগ চেয়েছি মাত্র। দ্বিতীয়ত, সংসার সামলানোর সঙ্গে আবেদনের বয়স বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই। ১৯ থেকে শুরু করে যে কোনও বয়সী মেয়ে এবং ২৫ থেকে শুরু করে যে কোনও বয়সী ছেলের বিয়ের বয়স শুরু হয়। তাহলে চাকরি উপযোগী বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করলে লাভ কি? মোটামুটি শিক্ষিত হওয়ার মতো শিক্ষাটুকু অর্জন করলেই হয়। বরং বয়সসীমা ৩০ থাকার কারণে সংসার সামলাতে গিয়ে অনেক মেয়ের অর্জিত সনদগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে রয়। যদি বয়সসীমা বাড়ানো হয় তাতে মেয়েরা বরং আরও আবেদন করার সুযোগ পেয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে। তৃতীয়ত, পেনশনের সঙ্গে চাকরির আবেদনের বয়সসীমার বাড়ানোর কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ জাতির প্রয়োজনে যে কোনও সময় সংবিধান বার বার পরিবর্তন হচ্ছে এবং হবে। আর চাকরি হলে তো পেনশনের কথা আসবে। আমাদের আগে চাকরি দরকার, তারপর পেনশন।
পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর রয়েছে। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো দেশগুলোর জিডিপি বেড়েছে, বেকারত্ব কমেছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিভিন্ন দেশই এমনটা করেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অবস্থান করে বাংলাদেশে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ না করার যৌক্তিকতা কী, সেই প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছরে উন্নীত ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষা জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে নেয়া, আবেদন ফি কমিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এই দাবিগুলো পূরণে জুলাই মাসে দেশব্যাপী আন্দোলনের ঘোষণাও দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন, সজিব চৌধুরী আহমেদ, ইউসুফ আলী প্রমুখ।