মোবাইল চার্জার চুরির অপবাদ দিয়ে রাজধানীর ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে তিনদিন ধরে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী মঙ্গলবার (১০এপ্রিল) হল সুপার বরাবর দরখাস্ত দিয়ে হল ত্যাগ করেছেন।
নির্যাতনের ব্যাপারে বাইরে কাউকে জানালে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে কলেজের প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহার। শামসুন্নাহার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাবেক একান্ত সচিব এ এস মাহমুদের স্ত্রী। অভিযুক্ত প্রধান নির্যাতনকারী জারিন তাসনিম পূর্ণি ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। অন্য নির্যাতনকারীরা হলো সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তানিয়া, একই বর্ষের ভূগোল বিভাগের আনিসা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উষা।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রী সেঁজুতি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোটবেলা থেকে তার কিডনির সমস্যা ও থ্যালাসেমিয়া রোগ রয়েছে বলে তার পরিবার সংশ্লিষ্ট একজন জানান।
জানা যায়, সেজুতি চারদিন আগে ছাত্রলীগ নেত্রী পূর্ণিকে মাসিক এক হাজার টাকা চাঁদা দেয়ার বিনিময়ে কলেজের হাসনাহেনা হলের ৩০২ নম্বর কক্ষে ওঠে। হলে ওঠার প্রথম দিনই কক্ষের তমা নামের এক বহিরাগত ছাত্রীর মোবাইল চার্জার হারিয়ে যায়। সেজুতি তার চার্জার চুরি করেছে বলে তমা পূর্ণির কাছে অভিযোগ দেয়।
পূর্ণি তার লাগেজ তল্লাশি করে। কিন্তু মোবাইল চার্জার না পেয়ে পূর্ণির নির্দেশে সেঁজুতিকে মারধর শুরু করে কয়েকজন। চার্জার চুরির শাস্তি হিসেবে তাকে কলেজের সর্ববৃহৎ হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার ১১ তলা ভবনে তিনবার ওঠানামা করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের কথামত সে অসুস্থ শরীর নিয়ে ওই ১১তলা ভবনে তিনবার ওঠানামা করে। নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বলেন, তাকে চার্জার চুরির অভিযোগ দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু সে চার্জার নেয়নি। তাকে চার্জার চুরি করেছে, এমন একটি স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে ছাত্রলীগ নেত্রী সেটির ভিডিও করেন বলে জানায় সে।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত পূর্ণি বলেন, ওই ছাত্রী চার্জার চুরি করে এবং পরে ফেরত দেয়। আমি তাকে অন্যরুমে যেতে নিষেধ করেছি। কারণ অন্যরুম থেকে সে কিছু চুরি করলে তার দায়ভার আমার ওপর এসে পড়বে। তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
ঘটনার বিষয়ে কলেজ প্রিন্সিপাল শামসুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন অন্য একজন রিসিভ বলেন তিনি জরুরি মিটিংয়ে আছেন। ইডেন কলেজ গেটে তার সাক্ষাৎলাভের জন্য সকাল ১১টা হতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি।
ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে অবহিত করলে তিনি বলে দায় সারেন।