ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ দেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ দেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজনীতি ও সন্ত্রাস এক নয়। একটি আরেকটির বিপরীত। যেকোনো দ্বন্দ্ব বা সমস্যা সমাধানের দুটি পথ রয়েছে- রাজনীতি ও সহিংসতা/সন্ত্রাস। রাজনীতি হচ্ছে দ্বন্দ্ব নিরসনের বৈধ মাধ্যম বা প্রক্রিয়া। অন্যদিকে সহিংসতা হচ্ছে দ্বন্দ্ব নিরসনের অবৈধ মাধ্যম। রাজনীতি ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করে। তাই রাজনীতি বৈধ ও স্বীকৃত। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন মো. তানভির রহমান।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দশ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এই দশ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। বুয়েট শিক্ষক সমিতি এবং বুয়েট অ্যালামনাইও একই দাবি জানায়। এই দাবির মধ্য দিয়ে বুয়েটে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু বুয়েট নয়, দেশের আরও একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি আগে থেকেই নিষিদ্ধ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের কারণ সহিংসতা ও সন্ত্রাস।

এছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও ছাত্র রাজনীতি অপ্রয়োজনীয় মনে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। এসব শিক্ষার্থী মনে করছেন, যেহেতু ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি থাকার কারণে সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহেতু ক্যম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকাই ভালো। ভুলটা এখানেই হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতি না থাকলে সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে এরকম নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। ছাত্র রাজনীতি নেই এরকম অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষককে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হতে দেখা গেছে। র‌্যাগিংয়ের মতো ঘটনাগুলো রাজনীতি নেই এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাধাহীনভাবে চলছে।

রাজনীতি হচ্ছে অধিকার আদায়ের মাধ্যম। যেখানে অধিকারের প্রশ্ন আছে সেখানে রাজনীতিও আছে। ছাত্রদের যদি অধিকারের প্রশ্ন থাকে তবে ছাত্র রাজনীতিও থাকতে হবে। রাজনীতি ছাড়া ছাত্রদের অধিকার আদায় সম্ভব নয়। আমরা সন্ত্রাস ও রাজনীতিকে এক করে দেখছি। ক্যাম্পাসে আগ্রাসনের জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা না বলে বরং রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি। আমাদের মনে রাখতে হবে সন্ত্রাস ও রাজনীতি এক নয়। তাই সন্ত্রাসের অজুহাতে রাজনীতি বন্ধেরও কোন যৌক্তিকতা নেই। সন্ত্রাস রাজনীতির নামে ঘটতে পারে, ধর্মের নামেও ঘটতে পারে। তাই বলে সেটা রাজনীতি বা ধর্ম নয়। সেটা শুধুই সন্ত্রাস। তাই আমাদের রাজনীতি বন্ধ না করে বরং সন্ত্রাস বন্ধ এবং পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু রাজনীতির পথ তৈরি করা উচিত। মাথা ব্যথা হতেই পারে। তার জন্য মাথা কেটে ফেলা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। তেমনি রাজনীতির নামে সন্ত্রাস হচ্ছে বলে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ কোনভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।

সম্প্রতি বুয়েটে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড, যার মধ্য দিয়ে বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো- সেটি কোন রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এটি শুধুই একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কিন্তু দুঃখের বিষয় বুয়েটে সন্ত্রাস বন্ধের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল যদি ধর্মের নামে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে কি ধর্ম পালন নিষিদ্ধ হবে? নিশ্চয় না। কারণ ধর্ম আর সন্ত্রাস এক নয়। দুটো আলাদা ব্যাপার। ধর্মের নামে সন্ত্রাস হতে পারে তবে সেটা ধর্ম নয়। ঠিক তেমনি রাজনীতি ও সন্ত্রাসও সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ব্যাপার। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস হতে পারে তবে সেটা রাজনীতি নয়।

রাজনীতি শিক্ষিত সমাজের জন্যই উপযুক্ত। মেধাবী, শিক্ষিত ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি করবে এটাই কাম্য। শিক্ষিত সমাজ রাজনীতিতে আসলে তবেই দেশের মঙ্গল সূচিত হবে। রাজনীতি একটি দেশের জীবনী শক্তি। রাজনীতিহীন দেশ টিকতে পারে না। অশিক্ষিত শ্রেণীর হাতে রাজনীতি ছেড়ে দিলে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গলই বেশি হবে। সেখানে আমরা আইন করে শিক্ষিতদের রাজনীতিতে আসতে বাধা প্রদান করছি। রাজনীতিতে হঠাৎ প্রবেশ করে রাজনীতির হাল ধরা যায় না। ভালো নেতৃত্বগুণ পেতে হলে রাজনীতি চর্চা দরকার। আর এই চর্চা হতে হবে ছাত্রজীবনে এবং উত্তম চর্চাক্ষেত্র হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে নিঃসন্দেহে দেশ অন্ধকারে পতিত হবে। সাম্প্রতিককালে চলমান ঘটনা প্রবাহে আবেগতাড়িত হয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও দীর্ঘকালে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মনে করছেন শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির আর প্রয়োজন নেই। তারা মনে করছেন অতীতে ছাত্র রাজনীতির বড় বড় অবদান থাকলেও বর্তমানকালে এর তেমন কোন ভূমিকা নেই; সুতরাং এর প্রয়োজনীয়তাও নেই।

আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাব- দেশে যারা রাজনীতি করছেন এবং দেশের হাল ধরে রেখেছেন তারা মোটামুটি সবাই ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়েই উঠে এসেছেন। অর্থাৎ ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়েই এদের নেতৃত্বগুণ বিকশিত হয়েছে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি অপ্রয়োজনীয় মনে করার কোন কারণ নেই।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে ছাত্র রাজনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘স্বৈরচার পতন’ আন্দোলন পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা সবারই জানা এবং বহুল আলোচিত। আলোচিত ঘটনার বাইরে অতীত বাদ দিলেও সাম্প্রতিকালে ছাত্র সংগঠনগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীর অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান ও আন্দোলন কম গুরুত্ববহ নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন, শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন, যথাযথ শিক্ষানীতির জন্য আন্দোলন ইত্যাদি ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলো ছাত্র সংগঠনগুলোই করে আসছে। কোন শ্রমিক সংগঠন বা কৃষক সংগঠন কোনদিন ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবি-দাওয়া নিয়ে এগিয়ে আসেনি, কোনদিন আসবেও না। তাহলে যারা ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলে সেই ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কি ঠিক হচ্ছে? কোন ছাত্র সংগঠন রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত থাকলে সেই ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে, রাজনীতি নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্র রাজনীতি মানেই ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের রাজনীতি নয়।

সন্ত্রাসমুক্ত ছাত্র রাজনীতি কোন অলীক কল্পনা নয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই সন্ত্রাসমুক্ত, উদার রাজনীতি চর্চা হয়। বাংলাদেশেও এরকম উদার রাজনীতি চর্চা সম্ভব। এর জন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা, জনসচেতনতা এবং কঠোর আইন ও তার প্রয়োগ। পৃথিবীর কোনো দেশেই উদার রাজনীতি একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি এর জন্য বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। বাংলাদেশেও একদিনে সন্ত্রাসমুক্ত, উদার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর জন্য আমাদের হয়তো আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হতে পারে। তবে এর মানে এই না যে কোনদিনও এদেশে উদার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে না। ছাত্রদেরই এক্ষেত্রে বরাবরের মতো সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাসের বিপক্ষে লড়াই করতে হবে। সেটা না করে সন্ত্রাসের অজুহাতে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়া মূলত সন্ত্রাসের কাছে পরাজয় বরণ করে নেয়া। আজকে আমরা যদি সন্ত্রাসমুক্ত ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে এর হাত ধরে কালকে হয়তো সন্ত্রাসমুক্ত, উদার জাতীয় রাজনীতি আসবে।

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0092267990112305