ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই হতে হবে ছাত্রবান্ধব - Dainikshiksha

ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই হতে হবে ছাত্রবান্ধব

জোহরা মহসীন |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। ব্যাপারটা ছিল আমি ক্যামপাসে আসতাম যেতাম, দেখতাম এমনটা। এই আসা-যাওয়ার মাঝেই কবে যেন ঠিক করে ফেললাম এখানেই আমাকে আসতে হবে। এবং এক সময় সেটা সত্য হয়ে গেল। এবারে আসি মূল কথায়—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হলে জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। মেয়েদের হলে তবু ধারভিত্তিতে কিছু সংখ্যক জায়গা দেওয়া হয়, ছেলেদের অবস্থাটা বেশ খারাপ। খারাপ বলছি কারণ এখানে হলে জায়গা পাবার প্রশাসনিক কোনো পথ নেই। বেশিরভাগ সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা উঠে আসে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই রাজধানী শহরে অন্য কোনো পথ না দেখে সরকারি দলের নীতির হাতে নিজেকে সঁপে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। অবশ্য আর কোনো পথও থাকে না।

আমাদের একটা ধারণা—ছাত্ররাজনীতি না থাকলে দেশের উন্নতি হবে না এমন কিছু। কিন্তু দেখা গেছে যখন সরকারি দল ছাত্রদেরকে নিজেদের ডানহাত হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে তখন থেকেই ছাত্ররা পড়াশোনা ছাড়া রাজনীতিতে বেশি ঝুঁকেছে। যেহেতু পলিটিক্যাল মানেই সাত খুন মাফ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েও হলের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা প্রভৃতি দৈনন্দিন নিয়মে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিতে কাদা ছোড়াছুড়ির ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই বেশ প্রচলিত। ডানহাত হবার কারণে এরা নিয়মিত রাজত্ব করে বেড়ায় ক্যামপাসে। অথচ সরকার বদলের সময় এদেরকেই আবার দেখা যায় স্রোতের বিপরীতে ভাসতে। ছাত্ররাজনীতি মহান ছিল ১৯৭১-এ। তখন ছাত্ররাই মূলত ছিল সবার সামনে। ৭১ পরবর্তীকালে স্বৈরাচারী এরশাদ হটানোর উত্থানে ছাত্রভূমিকা প্রশংসনীয়। কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভয়ের কারণ। গেস্টরুমগুলো যুগে যুগে হয়েছে কনসেনট্রেশন ক্যামপ। কিছুটা ব্যক্তিগত আক্ষেপ থেকেই বলি, এক একটা হলে ছাত্ররা বলুন, আর ছাত্রীরাই বলুন, এত মানবেতর জীবন যাপন করে সেটা দেখলে কখনো মনে হয় না ছাত্রদের মূল উদ্দেশ্য পড়াশোনা করা। বরঞ্চ সব সময় টিকে থাকার লড়াই চলে এখানে।  অথচ ওই সময়টাতে তাদের থাকার কথা ছিল লাইব্রেরিতে কিংবা ক্লাসে। কেউ হয়তো জানালার পাশে বসে আনমনে আকাশই দেখত, মেঘের নীলরং ছুঁয়ে যেত তার হূদয়।

ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই হতে হবে ছাত্রবান্ধব। ছাত্ররা সবার আগে ছাত্র তারপরে দলীয় কর্মী। প্রয়োজনে নামধারী কর্মীরা নয় বরঞ্চ সাধারণ ছাত্ররাই নিজেদের দায় কিংবা দেশের প্রতি মমত্ববোধ থেকে পথে নামে। আমাদের রাজনীতি থেকে এখন শিক্ষা ব্যাপারটা মুছে গেছে বললেও বোধকরি ভুল হবে না। বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অপশক্তির প্রভাবে তা বিলীন। এমনকী শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন এবং সদ্য রেশ না কাটা কোটা আন্দোলনের কথা বলা যায়। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই পথে নেমেছিল। এবং সেখানে সাহায্য করার বদলে উলটো মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্ররাজনীতির সক্রিয় কর্মীরা। অথচ সাধারণ ছাত্রদের হাত কতটা শক্তিশালী আন্দোলনের ফলাফলই তা বলে দেয়। ছাত্ররাজনীতির সুফল মানুষের চোখে না ধরা পড়াতে ইদানীংকালে রাজনীতি ব্যাপারটাই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররাজনীতির আড়ালে কিছু সন্ত্রাস ঢুকে পড়ে যারা জনসম্মুখে বিভিন্ন খারাপ কাজ করে দলের নামে কালি লাগিয়ে বেড়াচ্ছে।

আমি অবশ্যই এটা বলছি না ছাত্ররাজনীতির দরকার নেই, বরঞ্চ বলছি সরকার তাদের ডানহাত না ভাবুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল মিনি কনস্ট্রাকশন ক্যামপ না হয়ে ছাত্রদের থাকার উপযুক্ত হোক। সর্বোপরি শিক্ষা সহায়ক হোক। আমাদের মাথায় রাখা উচিত ছাত্ররা সবার আগে শিক্ষার্থী এবং এদের হাতেই দেশ রক্ষার ভার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036430358886719