যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইব্রাহিম হোসেন মোল্যার মেডিকেল ছুটি শেষ হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারছেন না। তাই, শারীরিক সুস্থতা প্রমাণের পড়ো স্কুলে যোগদান করতে না পারায় বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না তিনি। বেতন-ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন শিক্ষক ইব্রাহিম মোল্যা।
যদিও যশোর জেলা শিক্ষা অফিসের দাবি, শিক্ষক ইব্রাহিম মোল্লা পাঠদানের জন্য সম্পূর্ণভাবে সুস্থ নন। তাই স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে যোগদান করতে দেয়া হচ্ছে না।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ইব্রাহিম হোসেন মোল্যা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে একমাস ছুটিতে কাটানোর পর চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২০১৯ খিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বেডরেস্টে থাকার জন্য দুই মাসের ছুটির আবেদন করেন। অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা আবেদনটি সুপারিশ করে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠায়। তারপর দুই মাসের ছুটি মঞ্জুর হয়। দুই মাস ছুটি শেষে তিনি যোগদান করতে গেলে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে জানানো হয়, যোগদান করতে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল বোর্ডের ফিটনেস সার্টিফিকেট লাগবে।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, গত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর যশোর সিভিল সার্জন অফিসে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে সুস্থ ঘোষণা করে জানান, বিদ্যালয়ে পাঠদানে তার কোন অসুবিধা হবে না। সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল বোর্ডের প্রত্যয়নপত্র সংযোজন তিনি করে অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের আদেশ পেতে আবেদন করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে জানানো হয় বিষয়টি যেহেতু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পর্যন্ত গঁড়িয়েছে সেহেতু আপনার যোগদানের বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিষয়টি জানার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষক ইব্রাহিম মোল্যা তার স্ত্রী ও শ্বশুরকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে জেলা শিক্ষা অফিসে ঘোরাঘুরি করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যোগদানের বিষয়ে কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে না পারায় এবং বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে তাকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
যদিও ইব্রাহিম হোসেন মোল্যা ক্লাস শুরু করার মতো সম্পূর্ণ সুস্থ নন বলে দাবি করেছেন যশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইব্রাহিম মোল্যা চলাফেরা করতে পারেন না। ঠিক করে কথাও বলতে পারেন না। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে সিভিল সার্জন তাকে শারীরিক ফিটনেসের প্রত্যয়ন দিয়েছে। কিন্তু তিনি ক্লাস নিতে পারেন না। স্কুলেও যান না। স্ত্রী দিয়ে তিনি ক্লাস করান। এলাকার মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। আগামী জুলাই মাসে নতুন করে মেডিকেল বোর্ডে তার আবারো ফিটনেস যাচাই করা হবে। শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ থাকলে সব বকেয়া বেতন দিয়ে তাকে যোগদান করানো হবে। আর অসুস্থ্য থাকলে তার পাওয়া পরিশোধ করে অবসরে দেয়া হবে।