ছোটনের জীবনের 'মূল্য' ৭ লাখ টাকা! - দৈনিকশিক্ষা

ছোটনের জীবনের 'মূল্য' ৭ লাখ টাকা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সংগীত পরিচালক পারভেজ রবের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইয়াসির আলভী রব। একই ঘটনায় প্রাণ হারান তার বন্ধু মেহেদী হাসান ছোটন। দীর্ঘ চিকিৎসায় আলভী এখন অনেকটাই সুস্থ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারেন। তবে তাকে জীবনভর  বইতে হবে এ দুর্ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি। আগের মতো আর ছুটতে পারবেন না। ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আর নিহত ছোটনের জীবনের দাম নির্ধারণ হয়েছে মাত্র সাত লাখ টাকা! তার স্বজনদের তিন কিস্তিতে এই টাকা দিতে চেয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে তুলে নিতে হবে মামলা। ছোটনের বাবা অবশ্য টাকার বিনিময়ে ছেলে 'হত্যা'র ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার পক্ষে নন। তবে মামলা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও তার আগ্রহ নেই। তার মন্তব্য, 'তাতে কি আর পোলারে ফির‌্যা পামু?' মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ইন্দ্রজিৎ সরকার।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলা হয়। এই থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জানান, বাদী-বিবাদীপক্ষের মধ্যে সমঝোতার একটি তথ্য তিনিও শুনেছেন। তবে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কিছু জানায়নি। তা ছাড়া এটি তার দেখার বিষয়ও নয়। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্ঘটনায় দায়ী বাসটির চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। হেলপারের ব্যাপারেও তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি প্রক্রিয়া চলবে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান পারভেজ রব। এর দু'দিন পর ৭ সেপ্টেম্বর তার কুলখানির জন্য বাজার করতে গিয়ে একই পরিবহনের একটি বাস দেখেন আলভী ও ছোটন। তারা প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যে বাসটিতে ওঠার চেষ্টা চালান। এ সময় বাসটির হেলপার দরজা বন্ধ করে দেন। চালক দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় বাসের ধাক্কায় আহত হন আলভী। আর তখন বাসের বন্ধ দরজায় ঝুলছিলেন ছোটন। তাকে দুই বাসের মাঝে ফেলে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।

ছোটনের বাবা ইউসুফ গতকাল সোমবার বলেন, 'পোলা মইরা গেছে, কিন্তু ওর ব্যবহার করা জিনিসপত্র আছে। সেগুলার দিকে চোখ পড়লে বুকটা মোচড় দিয়া ওঠে। আইজক্যাও ওর গেঞ্জি দেইখা কাইন্দা ভাসাইছি। পারভীন (ছোটনের মা) তো সারাদিনই কান্দে।'

ইউসুফ জানান, বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পারভেজ রব হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী ছোটন। দুই বছর আগে তিনি উত্তরা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করলেও অর্থাভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। ঘটনার সময় ভিক্টর পরিবহনের বাসচালক আলভীকে চিনতে পেরেছিলেন। তাই তিনি দ্রুত পালানোর চেষ্টা চালান। তখনই আলভীকে ধাক্কা ও ছোটনকে চাপা দেয়। এ ঘটনায় তার ভাগ্নে ফিরোজ বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে পরিবহন কর্তৃপক্ষ সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। তিনি এতে সায় দেননি।

ইউসুফ বলেন, কোটি টাকা দিলেও তিনি তো আর ছেলেকে ফিরে পাবেন না। আবার মামলা চালিয়ে যাওয়াও তার পক্ষে সহজ নয়। আগে তার গ্রিলের ব্যবসা ছিল। এখন তাও নেই, অর্ডার পেলে টুকটাক কাজ করেন। তা ছাড়া বিচারে ১০ জনের ফাঁসি হলেও তার লাভ কী? তিনি বরং নিজে পরিশ্রম করে উপার্জিত অর্থে ছেলের নামে একটি ছোট্ট মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করবেন। আপাতত এটাই তার স্বপ্ন।

তবে তার অনীহা থাকলেও ভাগ্নে ফিরোজ ও ছোটনের মা পারভীন পরিবহন কর্তৃপক্ষের সমঝোতার প্রস্তাবে রাজি। তারা এরই মধ্যে নগদ তিন লাখ টাকা দিয়েছে। আর চার লাখ টাকার দুটি চেক দিয়েছে ২৭ অক্টোবর ও ২৭ নভেম্বর তারিখের। টাকা ও চেক এখনও ফিরোজের কাছেই আছে।

এদিকে, সপ্তাহখানেক আগে আলভীর শরীর থেকে প্লাস্টার খুলে ফেলা হয়েছে। তিনি এখন একটু একটু করে হাঁটার চেষ্টা করছেন। পারছেনও, তবে কষ্ট হচ্ছে। গতকাল তিনি বলেন, 'কোহিনূর কেমিক্যাল কোম্পানি চিকিৎসা সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছিল। তাদের খরচে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মগবাজারের একটি হাসপাতালে আমার অস্ত্রোপচার হয়। ওই মাসের শেষের দিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসি। চিকিৎসকরা বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও অন্তত তিন মাস লাগবে। অবশ্য তার পরও কখনও ভারী জিনিস তোলা যাবে না। ভারী কাজ করা যাবে না। বেঁচে আছি, এটা আনন্দের। তবে সারাজীবনের জন্য দুর্বল হয়ে পড়লাম। আগে প্রতিবার স্কুল-কলেজের দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেতাম। আর কখনও দৌড়ানো হবে না। এটা ভাবতেই খারাপ লাগে।'

আলভী জানান, বাসচাপায় পারভেজ রবের মৃত্যুর ঘটনায় সমঝোতা না করায় এবং সেদিন প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। আর তার বন্ধু ছোটনের তো প্রাণই গেছে। তাই পরিবহন কর্তৃপক্ষের সমঝোতার প্রস্তাব আমলে নেয়ার চিন্তা করছেন তার মা রোমানা সুলতানা। কারণ, এবার তিনি (আলভী) বেঁচে গেছেন, কিন্তু এরপর যদি আবারও তার বা বড় ভাই ইয়াসিন ইশরাক রবকে বাস চাপা দেয়?

উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আলভী জানান, বাবার মৃত্যুর পর জমানো অর্থে চলছে তাদের সংসার। সংসারের হাল ধরতে তার বড় ভাই একটি চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যথায় তিনি ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। আর আলভীর স্বপ্ন অভিনেতা হওয়া।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074150562286377